বুধবার (১ নভেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম জোনের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (সিওপিএস) মো. বেলালউদ্দিন বাংলানিউজকে এ খবর নিশ্চিত করেন।
তিনি আরো জানান, গত ১ বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ থেকেও অনুরূপ পরীক্ষামূলক বন্ধন এক্সপ্রেস কলকাতা গিয়েছিলো।
পরীক্ষামূলক বন্ধনে কলকাতা থেকে আসবেন ভারতীয় রেলের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। ওই দিন খুলনায় পৌঁছে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যায় তারা ‘বন্ধন’-এ ফিরে যাবেন কলকাতায়। তবে বাংলাদেশ থেকে আর কোনো পরীক্ষামূলক ‘বন্ধন’ এক্সপ্রেস কলকাতা যাবে কিনা এখনও তা ঠিক হয়নি।
বেলালউদ্দিন জানান, দ্বিতীয় মৈত্রী রেল ‘বন্ধন’ এক্সপ্রেসটি হচ্ছে ভারতীয় রেল। ‘বন্ধন’ সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতা থেকে ছেড়ে দুপুরে খুলনা পৌঁছুবে। একঘণ্টা বিরতি দিয়ে সন্ধ্যার আগেই কলকাতার চিৎপুর স্টেশনে ফিরবে।
তিনিসহ বাংলাদেশ রেলওয়ের তিন কর্মকর্তা গত সেপ্টেম্বরের ২৪ ও ২৫ তারিখে কলকাতায় ভারতীয় রেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাংলাদেশের ওই তিন কর্মকর্তা হলেন-সিওপিএস মো: বেলালউদ্দিন, চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মিজানুর রহমান এবং চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসার গৌরাঙ্গ।
সিওপিএস জানান, মূলত: ‘বন্ধন’র ভাড়াসহ নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে ওই বৈঠক হয়েছে। উভয় পক্ষ বৈঠকে প্রাথমিক ভাড়ার একটি সিদ্ধান্তে এসেছেন। সেই সুপারিশ দু’দেশের কর্তৃপক্ষ নিয়ে গঠিত একটি কমিটির কাছে তারা হস্তান্তর করেছেন।
ভাড়ার ওই গ্রিন সিগনালটি এখন কমিটি দেবে। তবে প্রাথমিক প্রস্তাব ছিল- চেয়ার কোচে আট ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে আটশ’ টাকা) এবং কেবিনে ১২ ডলার (সাড়ে নয়শ’ টাকা)।
খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রীবাহী বন্ধন এক্সপ্রেস চলাচল শুরুর কথা ছিল চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১ জুলাই ও তৃতীয় দফায় ৩ আগস্ট ট্রেনটি চালুর উদ্যোগ নিলেও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি।
খুলনা-কলকাতা রুটে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিতীয় মৈত্রী ট্রেনটির নামকরণের প্রস্তাব করা হয়েছিল ‘সোনার তরী’। কিন্তু উভয় দেশের রেলে একই নাম ব্যবহৃত হওয়ায় তা বাদ দেওয়া হয়। এরপর প্রস্তাব গৃহীত হয় ‘বন্ধন’।
এই আন্ত:দেশীয় ট্রেনের যাত্রীদের জন্য বড় একটা সুখবর হলো- শুরুতেই প্রান্তিক স্টেশন খুলনা রেলস্টেশন এবং কলকাতার চিৎপুরে সারা হবে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা।
তাই চেক পোস্টে দীর্ঘ যাত্রা বিরতির বিড়ম্বনা সইতে হবে না বন্ধনের যাত্রীদের। খুলনা থেকে কলকাতা পর্যন্ত পৌনে দুশ’ কিলোমিটার রেলপথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টা।
খুলনা-কলকাতা রেল চলাচল নিয়ে গত ৫২ বছর ধরে আশায় বিভোর দুই বাংলার মানুষ। ব্রিটিশ শাসনামলে চালু হওয়া পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে খুলনা কলকাতা যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করত। বরিশাল থেকেই যাত্রীরা স্টিমার ও রেলের টিকিট এক সঙ্গে কেটে খুলনায় স্টিমার থেকে নেমে ট্রেনে উঠতো। নামতো গিয়ে একেবারে শিয়ালদহ স্টেশনে।
ইমিগ্রেশন-কাস্টমস সারা হতো রেলের কামরার মধ্যেই। সীমান্তে কোন বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হতো না। এছাড়া ট্রেন চলাচল করতো ফরিদপুরের গোয়ালন্দ-কলকাতা রুটেও। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে বন্ধ হয়ে যায় সব রেল চলাচল।
দু’দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ২০০৮ সালের ১ বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) থেকে ঢাকা-কলকাতা রুটে প্রথম মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু করা হয়। যা এখন আশাতীত লাভের মুখ দেখাচ্ছে উভয় দেশের রেলে।
খুলনা-কলকাতা বন্ধন এক্সপ্রেস অবশ্য ঢাকা-কলকাতার মৈত্রী এক্সপ্রেস থেকেও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। কেননা দু’দেশের মানুষের মধ্যে সব চেয়ে বেশি মানুষ চলাচল করেন এই বেনাপোল-হরিদাসপুর সীমান্ত দিয়ে। প্রায় প্রতিদিন ১০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি বেনাপোল-হরিদাসপুর হয়ে প্রতি দিন ভারত যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৭
এসএস/জেডএম