রাত পোহালেই তাদের বহনকারী এমবি রাজিয়া রওনা হবে সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগরমুখী দক্ষিণ সীমান্তে জেগে ওঠা দুবলার চরের উদ্দেশে।
সাইদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তারা ৬০জন একসঙ্গে প্রতিবছরের মতো এবারও দুবলার চরে যাচ্ছেন।
ঠিক এমনই আরেকজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান। তার বাড়ি কুড়িগ্রামে। বন্ধুর সঙ্গে দুবলার চরের রাস মেলায় যাওয়ার জন্য মুন্সিগঞ্জে এসেছেন তিনি।
শুধু সাইদ হোসেন বা মোস্তাফিজুর রহমান নন, তাদের মতো সারাদেশের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষের ঠিকানা এখন মুন্সিগঞ্জের চুনা নদী, রমজান নগরের মাদার নদী ও নীলডুমুরের খোলপেটুয়া নদী।
উপরে সামিয়ানা দিয়ে সাজানো গোছানো নৌকাগুলোতে কেউবা তাস খেলছেন, কেউ রান্নায় ব্যস্ত, আবার কেউ কেউ খোশগল্প করে সময় কাটাচ্ছেন। সবারই অপেক্ষা ভোরের জন্য।
রাস মেলার উদ্দেশ্যে ট্রলার সাজিয়ে দর্শনার্থীদের মতো অপেক্ষায় রয়েছেন আব্দুল হালিমও। সকাল হলেই পাড়ি দেবেন তিনি।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘বনবিভাগের নিয়মানুযায়ী সকালে সবাই একসঙ্গে রওনা হবো। এ জন্য দূর-দুরান্ত থেকে সবাই এসে রাতেই জড়ো হয়েছেন। কারণ সকালে আর সময় থাকে না। ’
এদিকে, একইভাবে সুন্দরবন ও উপকূলীয় প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় দর্শনার্থীদের সচেতন করতে মুন্সিগঞ্জ ও নীলডুমুর এলাকায় ব্যতিক্রমধর্মী প্রচারণা চালাচ্ছে সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিম, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিম, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক, শ্যামনগর উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।
এই প্রচারণা সম্পর্কে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিমের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ হাসান বাংলানিউজকে জানান, রাস মেলা উপলক্ষে হাজার হাজার দর্শনার্থী ২-৪ নভেম্বর সুন্দরবন ও দুবলার চর ভ্রমণ করবেন।
যাত্রাপথে কেউ যেন সুন্দরবনে লাউডস্পিকার না বাজায়, নদীতে পলিথিন বা অন্যান্য বর্জ্য ও তেল জাতীয় দ্রব্যাদি ফেলা থেকে বিরত থাকে—দর্শনার্থীদের সচেতন করার জন্য ক্যাম্পেইন করছেন তারা।
অন্যদিকে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এ বছর সুন্দরবনের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও বরগুনা অঞ্চল থেকে আটটি পয়েন্ট দিয়ে রাস মেলায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে সাতক্ষীরা অঞ্চল দিয়ে তিনটি রুট রয়েছে। এগুলো হলো বুড়িগোয়ালিনী, কোবাদক থেকে বাটুলানদী-বলনদী-পাটকোষ্টা হংসরাজ নদী হয়ে দুবলারচর। কদমতলা হতে ইছামতি নদী, দোবেকী হয়ে আড়পাঙ্গাসিয়া-কাগাদোবেকী হয়ে দুবলার চর ও কৈখালী স্টেশন হয়ে মাদারগাং, খোপড়াখালী ভাড়ানী, দোবেকী হয়ে আড়পাঙ্গাসিয়া-কাগাদোবেকী।
এসব পয়েন্ট দিয়ে অসংখ্য লঞ্চ, নৌকা ও ট্রলারে করে হাজার হাজার দর্শনার্থী আলোর কোলের উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রবেশ করবে। দর্শনার্থী ও তীর্থ যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তাসহ হরিণ শিকার রোধে বনরক্ষীদের পাশাপাশি পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড বাহিনী নিয়োজিত থাকবে।
এ ব্যাপারে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক শোয়েব খান বাংলানিউজকে জানান, সকাল ৮টায় দর্শনার্থী ও তীর্থ যাত্রীদের নিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কোস্ট গার্ড দুবলার চরের উদ্দেশে রওনা হবে। এ জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বঙ্গোপসাগরের কোলে ছোট্ট একটি দ্বীপ দুবলার চর। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদীর মোহনায় জেগে ওঠা এ দ্বীপেই বসে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় উৎসব রাসমেলা। প্রতি বছর কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় এ মেলা। প্রতি বছর তিন দিনব্যাপী উদযাপিত হয়। এ মেলায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছেও বেশ আকর্ষণীয়। মেলা শেষ হবে শনিবার (৪ অক্টোবর) পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৭
এসও/আরআইএস/