ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পৌষের হরেক পিঠায় দাদী-নানীর স্নেহমাখা ঘ্রাণ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭
পৌষের হরেক পিঠায় দাদী-নানীর স্নেহমাখা ঘ্রাণ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত পৌষমেলায় পিঠা খাওয়ার ধুম। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: সন্ধের সূর্যটা তখন শহর ছাড়িয়ে বেশ দূরে। তেজোদীপ্ত সূর্যের সে অনুপস্থিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে পৌষের কুয়াশা তার চাদরে ঢেকে নিলো পুরো শহরটা। সে চাদরে বাদ পড়েনি ছোট্ট শিশু থেকে বৃদ্ধজনও। আর তাতে যখন লাগানো হয় সংস্কৃতির ঘ্রাণ, তখন তরুণেরাই বা বাদ পড়ে কীভাবে! তাইতো সে আয়োজনে সবাই এক হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। মিলে যায় প্রাণের উৎসব পৌষমেলায়।

বিকেলে কথা হয় পৌষমেলায় আগত দর্শনার্থী ঋষিতা হেমার সাথে। বন্ধুদের নিয়ে বিকেলটা আনন্দময় করে তুলতে তিনি এসেছেন মেলাপ্রাঙ্গণে।

কথা হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, শীতের সময় পিঠা পুলির স্বাদ সব থেকে ভালো পাওয়া যায় গ্রামে। তবে সবসময় গ্রামে যাওয়া তো আপর হয়ে ওঠে না! তাই শহুরে পৌষমেলায় এসে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছি। বিশেষ করে নানা রকম পিঠার আয়োজন গ্রামে দাদী-নানীর ভালোবাসাটাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

মেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বসেছে পিঠার দোকান। সেসব দোকানে রকমারি ধাঁচের ও স্বাদের পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। একেক পিঠার একেক রঙ, একেক নকশা। রয়েছে ভিন্নধর্মী স্বাদও। ঘরোয়া পরিবেশে পিঠাগুলো গ্রামের বাড়ির চুলার পাশে বসে গরম গরম ভাঁপওঠা পিঠা খাবার স্মৃতি ফিরিয়ে দেয়।

কথা হয় বরিশাল পিঠাঘরের স্বত্বাধিকারী ফারজানা বন্যার সাথে। স্টলের সামনে প্রদর্শিত বিভিন্ন পিঠা দেখিয়ে তিনি বলেন, এসব পিঠার সবক’টাই একটি অন্যটির থেকে আলাদা। পৌষের শীতে নগরবাসীকে ঐতিহ্যবাহী পিঠার স্বাদ দিতেই বেশ ঘরোয়া পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে এসব পিঠা।

নকশি পিঠা, চিতই পিঠা, রস পিঠা, ডিম চিতই, দোল পিঠা, ভাঁপা পিঠা, পাটিসাপটা, পাকান, আন্দশা, কাটা পিঠা, ছিট পিঠা, গোকুল পিঠা, ইলিশ পিঠা, চুটকি পিঠা, মুঠি পিঠা, জামদানি পিঠা, হাড়ি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, পাতা পিঠা, ঝুড়ি পিঠাসহ আরও কতো কতো নাম! তার সাথে রয়েছে ডিজাইনের রকমারি।

কথা হয় পিঠার ক্রেতা আরিফুল ইসলামের সাথে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, পিঠা বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় খাবারগুলোর একটি। শহরে এসব পিঠা সবসময় পাওয়া যায় না। আবার তৈরি করতে গেলেও বিভিন্ন উপকরণের অভাবে ঠিকমতো তৈরি করাও সম্ভব হয় না। তাই এ পৌষে পিঠার স্বাদ মেটাতে এ পৌষমেলা অনন্য এক আয়োজন।

বিকেল ৪টা থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে বিকেলের রোদ ফুরোলে সন্ধ্যার আলোতেই এ মেলা প্রাণ পায় নগরবাসীর পদচারণায়। কুয়াশার সাথে পাল্লা দিয়ে সন্ধ্যার আঁধার যতো গাঢ় হয়, জমজমাট হয় পৌষমেলা প্রাঙ্গণও। বিশেষ করে নজরুল মঞ্চের বাঙালিয়ানা---এর সঙ্গীত, নৃত্য আর আবৃত্তি নজর কাড়ে দর্শক-শ্রোতাদের।

মেলা প্রসঙ্গে কথা হয় পৌষমেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি সংস্কৃতিজন গোলাম কুদ্দুসের সঙ্গে।

তিনি বলেন, আমাদের নিজেদেরকে এবং নতুন প্রজন্মকে আমাদের শেকড়ের কাছে, আমাদের অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির কাছে নিয়ে যাবার আগ্রহেই এ মেলার আয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭
এইচএমএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।