ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নিস্তব্ধ হাজারীবাগ ট্যানারিস্থল, নেই উৎকট গন্ধ!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
নিস্তব্ধ হাজারীবাগ ট্যানারিস্থল, নেই উৎকট গন্ধ! হাজারীবাগ এলাকার রাস্তা, অলিগলি, ঘরবাড়িতে এখন নেই ময়লা-আবর্জনা আর উৎকট দুর্গন্ধ। ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: ‘হাজারীবাগ’ নামটি শুনলেই যেন কল্পনায় ভেসে আসে দমবন্ধ করা উৎকট দুর্গন্ধ। নিতান্ত দায়ে না পড়লে, বিনা প্রয়োজনে কেউই হাজারীবাগের দিকে ঘুনাক্ষরেও পা বাড়াতেন না।কারণ পুরো  এলাকাজুড়ে বাতাসে ভেসে বেড়াতো কাঁচা চামড়ার বমি-উদ্রেক করা দুর্গন্ধ।

এলাকার রাস্তা, অলিগলি, ঘরবাড়ির আশেপাশে গরু-মহিষ-ছাগলের শিং, কান ও লেজ পড়ে থাকতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। আর এসব ঘিরে সারাক্ষণই ছিল মাছি-ভনভন করা আবিল পরিবেশ।

কখনও ড্রেনের পানি উপচে পড়তো সড়কে।  

কিন্তু আজকের হাজারিবাগ আর আগের রূপে নেই। মানে পুরনো, চেনা, আবিল চেহারাটি আর নেই। নেই ব্যস্ততার তীব্র কোলাহলও। বরং ট্যানারি সাভারে স্থানান্তরিত হওয়ার পর আজকের হাজারীবাগ অনেকটাই যেন কোলাহলহীন, নিস্তব্ধ।
 
সাভারে চামড়া শিল্পপল্লী গড়ে ওঠায় আজ বদলে গেছে হাজারীবাগের পুরনো দৃশ্যপট। এখানকার সরু অলিগলিতেও নেই আর উৎকট দুর্গন্ধ আর ময়লা-আবর্জনা। এখন চারিদিকে পরিচ্ছন্নতার ছোঁয়া। এই এলাকার বাসিন্দারা তাই পেয়েছেন স্বস্তি। তবে চারিদিক কেমন যেন অলসতাভরা থমথমে নিস্তব্ধতায় মোড়ানো।  একসময়ের জমজমাট ট্যানারি কারখানা এখন বন্ধ।  ছবি: ডিএইচ বাদলহাজারীবাগ সোলমেট ফ্যাশন হাউজের মালিক সাইদুর রহমান(২৯)। জন্মলগ্ন থেকেই হাজারীবাগের চামড়া শিল্পের উৎকট দুর্গন্ধের সঙ্গে ‘যুদ্ধ’ করেই বড় হয়েছেন। এখন তার কাছে হাজারীবাগ মানে যেন গুলশান-বনানী।

বদলে যাওয়া হাজারীবাগ প্রসঙ্গে সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পরিবেশ অনেক ভালো হয়েছে। আগে ট্যানারি যখন ছিল তখন অনেক সময় পশুর চামড়া ও শিং আটকে ড্রেনে ভরে যেতো। এখন সেই অবস্থা থেকে আল্লাহ মুক্ত করেছেন। মানুষজনের কোলাহলও আজ আর নেই। এখন বড় বড় ট্রাক-লরিও আর আসে না। আগে কেমিক্যাল মেশানো বাতাসে মায়ের স্বর্ণের গয়নাও পর্যন্ত বিবর্ণ হয়ে যেতো। বাসার ওয়ালও নষ্ট হতো। অনেক সময় পাইপ ছিদ্র হয়ে তাতে ট্যানারির দুষিত পানি ঢুকে পড়তো। আমাদের কষ্টের কোনো সীমা ছিল না। এখন হাজারীবাগ আমার কাছে গুলশান-বনানীর মতো ঝকঝকে তকতকে মনে হয়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেল প্রায় সব ট্যানারি এখন বন্ধ। অবশ্য কিছু ট্যানারিতে এখনো চামড়ার ফিনিশড পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। তবে কাঁচা চামড়ার গন্ধের উপদ্রব আর নেই। ট্যানারিগুলোর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। যেসব কারখানা ট্যানিং ড্রাম খুলে ফেলেছে শুধু সেইসব কারখানায় গ্যাস বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ দেয়া হয়েছে।

ট্যানিং ড্রামই চামড়াশিল্পের প্রধান যন্ত্র। ড্রাম খুলে ফেলা মানেই চামড়াশিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া। খুলে ফেলা এসব ড্রাম রাস্তার ওপরে ফেলে রাখা হয়েছে। এই শুকনা ড্রামের পাশে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে চানাচুর, মুড়ি, ছোলা ও বাদাম বিক্রি করছেন জাহেদ মিয়া।
ট্যানারি কারখানাগুলোতে এখন নিস্তব্ধতা।  ছবি: ডিএইচ বাদলহাজারীবাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাজারীবাগে কাঁচা চামড়ার কাজ গ্যাছে গা। এখন চারদিকের গন্ধও গ্যাছে গা। ’

সাধারণত কাঁচা চামড়ায় বুশান ৩০ এল(Busan 30 l)  নামক এক ধরণের বিষ ব্যবহার করা হয়। এই বিষ ব্যবহার করলে কাঁচা চামড়ায় পোকা ধরে না। তবে পরিবেশও বিষময় করে তোলে এই বুশান ৩০ এল। ক্রোম(chrome) নামক এক ধরনের ফরমালিন ব্যবহার করা হয় চামড়ায়। এটা ব্যবহার করলে চামড়া পচে না। তবে পরিবেশে নেমে আসে বিপর্যয়। এসবের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে হাজারীবাগ।

বিষয়টা স্বীকার করে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সহ-সম্পাদক সিরাজউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ট্যানারি চলে যাওয়ায় আমাদের অনেক মানুষ বেকার হয়েছে। তবে সত্য কথা বলতে কোনো দ্বিধা নাই, পরিবেশ অনেক ভালো হয়ে গেছে। কারণ কেমিক্যাল ও বিষ এলাকাকে বিষাক্ত করে ফেলেছিল। এখন হাজারীবাগে বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারি।

তিনি আরও বলেন, আগে এই এলাকায় আযান দিলে শুনতে পেতাম না। এখন লালবাগের মসজিদের আজানও কানে ভেসে আসে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
এমআইএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।