ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

গণতন্ত্র-সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তিন অঙ্গের সমন্বয় জরুরি 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৮
গণতন্ত্র-সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তিন অঙ্গের সমন্বয় জরুরি  বক্তব্য দিচ্ছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ছবি: পিআইডি

ঢাকা: রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্র ও সুশাসনের বিকল্প নেই। আর গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক এবং সমন্বয় খুবই জরুরি। তবে মনে রাখতে হবে এক্ষেত্রে কেউ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বরং সহযোগী।

প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্ট দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার (০২ জানুয়ারি) প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

সুপ্রিম কোর্ট জাজেস স্পোর্টস কমপ্লেক্সে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রতিটি বিভাগের সফলতার জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা ও আস্থা একান্ত অপরিহার্য।

এক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনকালে মনে রাখতে হবে এক বিভাগের কর্মকাণ্ডে যাতে অন্য বিভাগের কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয় বা জাতীয় স্বার্থ বিঘ্নিত না হয়। সকল বিভাগের কর্মকাণ্ডে দেশ ও জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

তিনি বলেন, আইনের শাসন, জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার রক্ষা এবং অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। একটি শক্তিশালী বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমেই সমাজ পরস্পর সংযুক্ত ও সামঞ্জ্যপূর্ণ থাকে।

সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্ব পালন নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ক্রান্তিকালেই যখনই প্রয়োজন হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সংবিধানকে রক্ষা করেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি দেশে সামরিক শাসন জারি করে সংবিধানকে নানাভাবে কাঁটাছেড়া করে গণতন্ত্রকে চিরতরে হত্যা করার অপচেষ্টা করেছিলো।  

‘কিন্তু এদেশের জনগণ তা হতে দেয়নি। স্বৈরশাসকরা তাদের পতনের পূর্বে অবৈধভাবে সংসদকে ব্যবহার করে সংবিধানের ৫ম ও ৭ম সংশোধনী পাসের মাধ্যমে তাদের সমস্ত অপকর্মকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট  তা হতে দেয়নি। ’
 
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ৫ম ও ৭ম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই এই অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের সেইসব অকুতোভয় বিচারপতি, যারা বন্দুকের নলের কাছে নতি স্বীকার না করে এবং নিজেদের বিবেককে বিকিয়ে না দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন তাদের গভীর কৃতজ্ঞতাভরে স্বরণ করছি।

ডিজিটাল বিচার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই যুগে সমনজারির জন্য আদালতে নৌকা ভাড়া দেওয়ার বিধান অচল। তাই আমাদের দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে মামলা ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আনতে হবে। দেশের সকল আদালতের দাফতরিক কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।  

সুপ্রিম কোর্টের রেকর্ড সংরক্ষণের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, সুপ্রিম কোর্ট যেহেতু কোর্ট অব রেকর্ড, সেহেতু এর সকল নথিকে ডিজিটাল নথিতে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ এবং মামলা দায়ের থেকে রায় ঘোষণা পর্যন্ত সমস্ত কার্যক্রমকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলখানা থেকে আদালতে আসামিদের উপস্থিতিকরণ এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এসব বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টকে ভবিষ্যতে ই-জুডিশিয়ারি বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। সরকার এসব বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক।

বিচার বিভাগকে রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের রক্ষক এবং চূড়ান্ত ব্যাখ্যা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল বিভাগ, সংবিধান ও আইনের যে ব্যাখ্যা প্রদান করে তা দেশের সকল আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক। একইভাবে হাইকোর্ট বিভাগের আইনের ব্যাখ্যা অধস্তন আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক।  

‘সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে জুডিশিয়াল রিভিউ এর ক্ষমতা। কিন্তু এই গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে অন্ত্যন্ত সতর্কতার সাথে,’ যোগ করেন আবদুল হামিদ।  

প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনরত বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্‌হাব মিঞার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট দিবস উদযাপন সংক্রান্ত জাজেস কমিটির সভাপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।  

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন।

অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আইনজীবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।

সংবিধান অনুযায়ী, ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রথম কার্যক্রম শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রথম কার্যদিবসকে প্রতিবছর সুপ্রিম কোর্ট দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  

১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের পূর্ব নির্ধারিত ছুটি থাকায় প্রথম কার্যদিবস (ছুটির পরে) ২ জানুয়ারি দিবসটি উদযাপিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২,২০১৭/আপডেট: ২০৫৫ ঘণ্টা
ইএস/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।