ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

স্বপ্নের ফ্লাইওভার, উচ্ছ্বসিত ফেনীবাসী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৮
স্বপ্নের ফ্লাইওভার, উচ্ছ্বসিত ফেনীবাসী গাড়ি চলাচল। ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী জেলার মহিপালে উদ্বোধন হয়েছে দেশের প্রথম ছয় লেনের ফ্লাইওভার। দীর্ঘদিনের স্বপ্নের ফ্লাইওভারটি চালু হওয়ায় উচ্ছ্বসিত ফেনীবাসী।

বৃহস্পতিবার (০৪ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করেন। এর পরপরই উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে ফেনীর জনগণের মধ্যে।


 
ফেনী-০২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর নেতৃত্বে হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে ফেনীর মহিপাল। উৎসুক জনতা সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিনের যানজট থেকে রেহায় পেয়ে হাসি ফুটেছে বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের মুখে।
 
ফ্লাইওভারটি উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মানুষের যাত্রা সহজ করতে সরকার নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ফেনীর মহিপালের এই ফ্লাইওভারটি এর একটি। মহিপালে যানজট ছিল বড় সমস্যা। ক্রসিংয়ে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে এই ফ্লাইওভার করা হয়েছে। ফ্লাইওভারটি চালু হওয়ায় ফেনীর সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি বাণিজ্যও বাড়বে। সময় কমবে ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতে।

প্রধানমন্ত্রী যখন টেলিভিশনের পর্দায় এসব কথা বলছিলেন, তখন ফ্লাইওভারে উচ্ছ্বসিত জনতার ভীড়, স্বপ্নের এই উড়ালসেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভাসছে ফেনীবাসী। ছবি: বাংলানিউজস্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনের অতিরিক্ত চাপে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ফেনীর মহিপালের নিত্যসঙ্গী ছিল যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাধারণ মানুষকে যানজটে পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হতো।

এই উড়ালসেতু চালু হওয়ায় যানজটের অসহনীয় ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলবে। সাশ্রয় হবে অর্থ, সময় ও কর্মঘণ্টার। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সূচিত হবে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। এছাড়া দেশের প্রথম ছয় লেনের উড়ালসেতু হিসেবে এটি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নের অনন্য মাইলফলক হয়েও থাকবে। এই অনন্য উন্নয়ন মাইলফলকের সাক্ষী হতে পেরে গর্বিত ফেনীবাসীও।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে ফলক উন্মোচন করার পর ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর গাড়ি যাওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক চলাচল শুরু হয় এই ফ্লাইওভারে। এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম মনির-উজ-জামান, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য জাহান আরা বেগম সুরমা, জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায়, পুলিশ সুপার এস এস জাহাঙ্গীর আলম সরকার, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুর রহমান বিকমসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

নিজাম হাজারী বলেন, মহিপালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সার্বিক সহযোগিতায় উড়ালসেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে পাল্টে যাবে ফেনীর দৃশ্যপট। এজন্য ফেনীবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

উদ্বোধন হওয়ার পর চাইলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ট্রাকচালক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, উড়ালসেতু চালু হওয়ায় দীর্ঘদিনের যানজট থেকে আমরা রেহাই পাবো।

আবদুস সাত্তার নামের একজন কাভার্ডভ্যান চালক বলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আর যানজটে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সোনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন বিগ্রেডের প্রধান মেজর জেনারেল ছিদ্দিকুর রহমান সরকার জানান, ১৮১ কোটি ৪৮ লাখ ২৯ হাজার টাকা ব্যয়ে মহিপালে দেশের প্রথম ছয় লেনের উড়ালসেতু নির্মাণ কাজ নিদিষ্ট সময়ের ছয় মাস আগেই শেষ হয়েছে। উড়ালসেতটি ছয় লেনের হলেও সেতুর নিচের দুই পাশে আরও চার লেন সার্ভিস চালু থাকবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট মহিপালে বস্তুত ১০ লেন সড়কই হচ্ছে।

আরও পড়ুন
দ্বার খুললো মহিপালের ৬ লেন ফ্লাইওভারের
বৃহস্পতিবার দ্বার খুলবে দেশের প্রথম ছয় লেন ফ্লাইওভার
র‌্যাপিড পাসের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

২০১৫ সালের পহেলা এপ্রিল উড়ালসেতু প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালের ৩০ জুন কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ছয় মাস আগেই কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। মূল উড়ালসেতুর দৈর্ঘ্য ৬৬০ মিটার ও প্রস্থ ২৪.৬২ মিটার। এক হাজার ৩৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের সার্ভিস রোড, সার্ভিস রোডের প্রস্থ ৭.৫ মিটার, এক হাজার ১৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের অ্যাপ্রোজ রোড, ১১টি স্প্যান, দুই হাজার ২১০ মিটার দৈর্ঘ্যের ফুটপাত ও ১৩২টি গার্ডার রয়েছে এতে।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর সহযোগী প্রতিষ্ঠান আবদুল মোমেন লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক রবীন্দ্র কুমার দাস জানান, মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রেখে উড়ালসেতু নির্মাণ করা ছিল একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেড চীন থেকে গেট্রি ক্রেন এনে সেতুর বড় বড় গার্ডার নির্মাণ কাজে ব্যবহার করে।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় এবং গেট্রি ক্রেন ব্যবহারের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৮
এসএইচডি/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।