ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মামলা তুলে নিতে চোখ হারানো শাহ জালালকে পুলিশের হুমকি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৮
মামলা তুলে নিতে চোখ হারানো শাহ জালালকে পুলিশের হুমকি সংবাদ সম্মেলনে চোখ হারানো শাহ জালাল/ছবি: মানজারুল ইসলাম

খুলনা: খুলনায় পুলিশের বিরুদ্ধে দুই চোখ উৎপাটনের অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামিদের অব্যাহত হুমকির মুখে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন অন্ধ শাহ জালাল এবং তার পরিবার।

এজাহারভুক্ত আসামি খালিশপুর থানার ওসিসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার না করায় এখনও মামলা তুলে নিতে অর্থের প্রলোভনও দেখানো হচ্ছে।

শনিবার (০৬ জানুয়ারি) দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়।

একই সঙ্গে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত দাখিল এবং ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করা হয়।  

সংবাদ সম্মেলনে অন্ধ শাহ জালালের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান অ্যাডভোকেট ঈশ্বর চন্দ্র সানা।  

লিখিত অভিযোগ বলা হয়, মামলার সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে এজাহারভুক্ত আসামি খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম খানসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের থানা থেকে প্রত্যাহার করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের প্রত্যাহার না করায় মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত ও তদন্ত প্রভাবিত করা এবং মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত অপচেস্টা অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া নাসিম খান ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিদের দিয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য অর্থের প্রলোভনও দেখাচ্ছে। কিন্তু তাদের আর্থিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া পুলিশ কর্মকর্তাদের চাপের কারণে পিবিআইও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে সময়ক্ষেপণ করছে। এমনকি মামলা দায়েরের পর পুলিশের ইন্দনে শাহ জালালের বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

সংবাদ সম্মেলনে শাহ জালাল বলেন, ওসি নাসিম খান এবং তার পুলিশ বাহিনী আর্থিক লালসার জন্য আমাকে পৃথিবীর আলো দেখা থেকে চিরদিনের জন্য বঞ্চিত করেছে। স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে খুচিয়ে দু’টি চোখ উপড়ে ফেলে আমার ভবিষ্যৎ ধ্বংস করেছে। চোখ হারিয়ে বর্তমানে আমি মানবেতর জীবনযাপন করছি। মামলা তুলে নিতে আসামিদের হুমকিতে পরিবার পরিজনসহ বেশ নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।

তিনি বলেন, ঘটনার পরদিন সুমা আকতার নামে এক নারীকে দিয়ে খালিশপুর থানায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ছিনতাই মামলা দেওয়া হয়। আসামিদের দ্রুত থানা থেকে প্রত্যাহার এবং দ্রুত পিবিআই’র তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের জন্য সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মহাপুলিশ পরিদর্শকসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

এ সময় শাহ জালালের বাবা জাকির হোসেন, মা রেনু বেগম এবং স্ত্রী ও শিশু সন্তান উপস্থিত ছিলেন।

২০১৭ সালের ১৮ জুলাই শাহ জালাল স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে নিয়ে পিরোজপুরের কাউখালি উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের বাড়ি থেকে খুলনা নগরীর নয়াবাটি রেললাইন বস্তি কলোনির শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে আসে। ওইদিন রাত ৮টায় তার মেয়ের দুধ কেনার জন্য বাসার পার্শ্ববর্তী দোকানে যায়। এ সময় খালিশপুর থানার ওসি নাসিম খানের নির্দেশে তাকে থানায় ডেকে নেওয়া হয়। এরপর পরিবারের কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা না দেওয়ায় রাতে শাহ জালালকে গাড়িতে করে নির্জন স্থানে নিয়ে স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে খুচিয়ে ২ চোখ তুলে দেয় পুলিশ। পরদিন ১৯ জুলাই পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় শাহজালালের মা রেনু বেগম বাদী হয়ে ৭ সেপ্টেম্বর খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিমের আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় দাবিকৃত টাকা না পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা যোগসাজসে তার ছেলে শাহ জালালের দু’টি চোখ উৎপাটন করে বলে অভিযোগ করা হয়। মামলায় খালিশপুর থানার ১১ পুলিশ ও আনসার কর্মকর্তাসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা,  জানুয়ারি ০৬, ২০১৮
এমআর/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।