ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঢাকায় এসে কী দেখলাম, বাবা...

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৮
ঢাকায় এসে কী দেখলাম, বাবা... জ্যামে পড়ে বারবার পেছন ফেরে মা-বাবাকে প্রশ্ন করছিলো শিশু সামিউল ও তার বোন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: দ্বিতল বাসের ওপরে একেবারে সামনের অাসনে পাশাপাশি বসেছে দুই শিশু। পেছনের আসনে তাদের মা-বাবা। রাস্তায় নানান বাহন, দুই পাশে সারি সারি অট্টালিকা ছোট শিশুটিকে দেখাচ্ছে তার বড়জন। এ নিয়ে কৌতুহল দু’জনেরই। বাস চলছে, গতি ধীর। কাকলী-বনানী-মহাখালী পেরিয়ে বাস থেমে গেল জাহাঙ্গীর গেট বরাবর, গন্তব্য সামনে...।

শীতের দুপুরে রোদটা তখন সামনের কাচ ভেদ করে বাসের ভেতরে তাদের মুখের ওপর।

‘অার কতদূর, বাবা...?’ প্রশ্ন করছে বড় শিশুটি।

‘এই তো সামনে!’ ছেলেকে সান্ত্বনা দেন বাবা।  

বাস একটু এগোয় তো থেমে যায় বেশি, বিরক্ত শিশুটি। এরমধ্যে বমিও হলো ছেলেটির। পাশে মা রুমাল, টিস্যু দিয়ে মুছে দিলেন।

বাস তখন একটু এগিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের সামনে থামে। প্রায় একঘণ্টা ধরে থেমে থাকা বাসে পলিথিনে স্বচ্ছ প্যাকেটে অালু ভাজি নিয়ে উঠলো এক হকার। বিরক্ত ছেলেকে থামাতে সবাই মিলে কিনলেন চার প্যাকেট, একটু শান্ত।

মচমচে ভাজা অালুর ভাজি দাঁতে পড়ে কড়কড় করছে তাদের। একটু পরেই শেষ। বাস এগোয়নি একটুও।

রাস্তার অপর দিকে উল্টো দিকে পথে ফাঁকা রাস্তায় সাইরেন বাজিয়ে চলা পুলিশের গাড়ির পেছনে ছুটছে পতাকাবাহী গাড়ি। ওই গাড়ি দেখিয়ে বাবাকে বললো, ‘অামাদের বাসটাও তো যেতে পারতো!’ অন্য এক যাত্রী বললো, ‘ওটা মন্ত্রীর গাড়ি, ওরা যেতে পারে, অামরা না। ’

ভ্রু কুচকে গেল শিশুটির।

এবার অাবার বাবার কোলে গিয়ে বললো, ‘বাবা অার কতদূর...?’ ‘সামনে!’ বলে থেমে গেলেন বাবা। তার কথায়ও বিরক্তির সুর।

এবার ছাড়লো বাস, স্বস্তির হাসি বড় শিশুর মুখে, হাসছে ছোটটিও। সাপ্তাহিক ছুটির দিন অসহনীয় যানজটে শনিবার বিজয় স্মরণি পেরিয়ে অাবার থেমে গেল।

যানজটে রাস্তা স্থবির, বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে শিশু সামিউল।  ছবি: বাংলানিউজ
ততোক্ষণে দেড়ঘণ্টা পার, মহাখালী থেকে তেজগাঁও থানার সামনে বাস। বাস চললেই খুশি শিশুটি।

ওপারে রাস্তা ফাঁকা। সাঁই সাঁই করে একটি দু’টি গাড়ি যায়। ধীরে ধীরে কমে গেল, একেবারেই কম বাহন। পুলিশ দাঁড়ানো খানিক পর পর। বড় শিশুটি দেখাচ্ছে ছোটজনকে। অাগ্রহ নিয়ে দেখছে দু’জনই।

খানিক বাদে সাইরেন বাজিয়ে গাড়ির সারি ছুটলো। ‘এতোগুলো পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স’।

বাবার কাছে জানতে চাইলে গাড়ির বহর সম্পর্কে জানাতে পারলেন না।

একজন যাত্রী বললেন, ‘ভিভিঅাইপি হতে পারেন। ’ কৌতূহল নিয়ে শুনলো দুই শিশু।

প্রায় দুই ঘণ্টা পার হলো, বাস এবার ফার্মগেটে। সাইনবোর্ড দেখে বাবাকে বললো, ‘বাবা ফারমগেট, এটা?’ ‘হুম’, জবাব বাবার।

এবার থামলো তো অার চললো না বিঅারটিসির দ্বিতল বাসটি।  

‘বাবা, বাবা, বাবা!’ কোলে এসে বিরক্তি সুর শিশুর।  

‘ঢাকায় এসে কী দেখলাম, দেখলাম শুধু গাড়ির জ্যাম!’ একাই একাই অাওড়াতে থাকলো শিশুটি।

পাশের সিটে শিশুর বাবার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বেড়াতে এসেছেন ঢাকায়। যাচ্ছেন শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অফিস সহায়ক নয়ন শীতের ছুটিতে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন।  

একদিন অাগে গাজীপুরের জয়দেবপুরে এক অাত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছেন, শনিবার সকাল ১০টার দিকে সেখান থেকে বাসে উঠে বেলা প্রায় ২টার দিকে তারা কারওয়ান বাজারের কাছাকাছি।  

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিউল জীবনে প্রথম এসেছে ঢাকায়। কিন্তু যানজটে তার কথায় ফুটেছে বিরক্তির সুর।

যানজটে থেমে থাকা বাসের সুপারভাইজর বললেন, ‘নেমে যেতে হবে। এ বাস অার যাবে না। অগত্যা উপায় না পেয়ে নেমে পড়লেন তারা। ’

‘অার অাসবো না, চলো...। ’ বলতে বলতে বাবার হাত ধরে বাস থেকে নামলো সামিউল।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৮
এমঅাইএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।