সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেতুর ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে দু’টি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে ৩০০ মিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। তৃতীয় স্প্যানটি পিলারের ওপর বসলে জাজিরা প্রান্তের ৪টি পিলারে সেতু দৃশ্যমান হবে ৪৫০ মিটার।
জানা যায়, রোববার সকাল থেকেই শুরু হবে স্প্যান বসানোর কার্যক্রম ও যদি কোনো জটিলতা না দেখা দেয় তাহলে সেদিনই পিলারের ওপর ওঠতে পারে স্প্যান বলে আশাবাদী দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা।
শনিবার বিকেলে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও তিন হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যান বহনকারী তিন হাজার ৬০০টন ধারণ ক্ষমতার ভাসমান ‘তিয়ান ই’ ক্রেনটি ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলার এলাকায় পৌঁছায়। এর আগে শুক্রবার (৯ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে যাত্রা শুরু করে স্প্যানটি। তবে নাব্যতা সংকট, তীব্র স্রোত এবং নকশা জটিলতায় পিছিয়ে মাওয়া প্রান্তের কাজ।
পদ্মাসেতু প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় স্প্যান বসাতে বাড়তি একদিন সময় লেগেছিল। এসব বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কোনো সিদ্ধান্ত কিংবা দিন তারিখ দেওয়া যায় না। রোববার পিলারের ওপর স্প্যান ওঠানোর জন্য প্রকৌশলীরা কাজ শুরু করবেন। যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে সোমবার গড়াতে পারে।
বিকেলে স্প্যানটি ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের কাছকাছি এসে পৌঁছায়। এছাড়া দ্বিতীয় স্প্যানটি জাজিরা প্রান্তে যাওয়ার সময় পাইল ড্রাইভের কাজের জন্য রাখা ক্রেন ও ভারী যন্ত্রাংশের কারণে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কিন্তু এবার যাতে তখনকার মতো সমস্যায় পড়তে না হয় সেজন্য আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর বসে প্রথম স্প্যানটি। এরপর চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যানটি বসানো হয়। সামনে আরো যেসব স্প্যান বসানো হবে সেক্ষেত্রে সময় আরো কমে আসবে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, এরই মধ্যে স্প্যান বহনকারী ক্রেনটিকে ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের সামনে পজিশন অনুযায়ী আনা হয়েছে। এরপর লিফটিং ক্রেনের সাহায্যে অস্থায়ী বেয়ারিংয়ের ওপর রাখা হবে স্প্যানটিকে এবং ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শুরু হবে। এছাড়া স্প্যান ওঠানোর আগে ওয়েট টেস্ট, ট্রায়াল লোড টেস্ট, বেজ প্লেট, পাইল পজিশন, মেজারমেন্টসহ আনুষঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হবে।
স্প্যান বসানোর পর ক্রেনটি সরিয়ে নেওয়া হবে। দ্বিতীয় স্প্যান বসাতে গ্রাউটিং সমস্যাসহ নানা জটিলতা দেখা দিয়েছিল এসব বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। এছাড়া চারটি ড্রেজার মেশিন নাব্যতা সমস্যা দূর করতে জাজিরা প্রান্তে আছে। ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলার পুরোপুরি প্রস্তুত আছে এবং ৪১ নম্বর পিলারটিও শেষ ধাপের কাজ চলছে।
পদ্মাসেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পিলারের পর পিলারে স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়েই সেতু পূর্ণ চেহারা পাবে। স্প্যান বসানোর আগে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করেছেন প্রকৌশলীরা। সবকিছু ঠিক থাকলে রোব বা সোমবারে বসবে তৃতীয় স্প্যানটি।
স্প্যান বসাতে আগে যেসব জটিলতা দেখা দিয়েছিল সেসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেল যাবতীয় পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে, স্প্যান বহনকারী ক্রেনটি দেখে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটের যাত্রী ও পদ্মা পাড়ের মানুষদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। পদ্মাসেতু নিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক মিডিয়ায় স্প্যান বসানোর সংবাদ পড়ে তারাও অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার লম্বা সেতুর ১৫০ মিটার পর পর ৪২টি পিলারের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াবে পদ্মাসেতু। এছাড়া দেড় কিলোমিটার করে উভয় পাড়ে তিন কিলোমিটার সংযোগ সেতুর জন্য আরও ২৪টি পিলার থাকবে। সেতুর ৪২টি পিলারে মোট ২৪০টি এবং দু’পাড়ের ১২টিতে ২৪টি পাইল বসানো হবে।
স্প্যানের ভেতরে থাকছে রেললাইন ও উপরে সড়কপথ। দ্বিতল পদ্মা বহুমুখী সেতুর পুরোটা হবে স্টিল আর কংক্রিট স্ট্রাকচারে। সেতুর উপরের তলায় থাকবে চারলেনের মহাসড়ক আর নিচ দিয়ে যাবে রেললাইন।
বাংলাদেশ ১৯০৪ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৮
এমএ/