তিনি বলেছেন, মার্শাল ল’র সময় যখন রাজনীতিবিদরা কথা বলতে পারছিলেন না, তখন শিল্পীরা তাদের নাটক, সংগীত ও চিত্রকলায় কথা বলেছেন।
সোমবার (১৯ মার্চ) বিকেলে শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের একক চিত্র প্রদর্শনী ‘শান্তি’র উদ্বোধন করে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার দুই নম্বর গ্যালারিতে শাহাবুদ্দিন আহমেদের মাসব্যাপী এ ‘শান্তি’ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
শিল্পকলা একাডেমি ও ভারতের কলকাতার গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারি যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এতে সর্বমোট ৩২টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে।
প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (শাহাবুদ্দিন আহমেদ) মুক্তিযুদ্ধকে গর্ব আর বঙ্গবন্ধুর আর্দশ মেনে চিত্রকলার চর্চা করে চলেছেন। তাকে আমি ছোট থেকেই চিনি, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জানি। আমরা থাকতাম পাশাপাশি। তার বহু চিত্রকর্ম আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের জন্য বিশাল সম্পদ। সবচেয়ে বড় কথা তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। এ পরিচয় তুলির আঁচড়ে তিনি নিয়মিত প্রকাশ করে চলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি এনে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা এ দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে তাচ্ছিল্য করেছে, তাদের বাঙালি চপেটাঘাত করতে পেরেছে।
অনুষ্ঠানে শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, আপা (প্রধানমন্ত্রী) জানতে চেয়েছিলেন, ফিগারেটিভ ও অ্যাবস্ট্রাক চিত্রকর্মের পার্থক্য কি? তার জবাবে আমি বলছি, আমি ছাড়া মঞ্চে কেউই শিল্পী নন, এটাই অ্যাবস্ট্রাক। তিনি আমাকে ভালোবেসেই আমাদের প্রদর্শনীর উদ্বোধন করতে এসেছেন।
‘আমার জীবনের তিনটি দিক আছে; ছবি আঁকা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্যারিসে যাওয়ার আগে দেশে দুর্ভিক্ষ চলছিল। সে সময় আমি ২৭ হাজার টাকা সংগ্রহ করে তার তহবিলে দেওয়ার জন্য চেক দিতে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, এ টাকা তোর বাবারে দে। আমি তাকে জোর করে চেকটা দিই। সে সময় তার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়েছিল। সেটাই ছিল তার সঙ্গে আমার শেষ সাক্ষাৎ। তিনি রাজনীতিবিদ নন, কারণ, রাজনীতিবিদরা কাঁদতে পারেন না। তিনি ছিলেন মানুষ। ’
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ইব্রাহীম হোসেন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারির পরিচালক স্মিতা বাজেরিয়া।
প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয় শাহাবুদ্দিন আহমেদের জীবন নিয়ে অজয় রায় নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘কালার অব ফ্রিডম’র অংশ বিশেষ। পাশাপাশি শিল্পকলা একাডেমির অ্যাক্রোবেটিক দলের পরিবেশনায় অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী গ্যালারিতে প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৮
এসকে/জেডএস