মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের দুঃসহ স্মৃতি বাংলানিউজের কাছে বর্ণনা দিতে গিয়ে কাঁদে ফেললেন সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য নাসিমা ফেরদৌসী। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে গ্রেনেড হামলার দুঃসহ যন্ত্রণা কথা যেন আর বলতে পারছে না।
সেদিন আওয়ামী লীগের নেত্রী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানের পাশেই ছিলেন নাসিমা ফেরদৌসী। শেখ হাসিনা বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ অনেক প্রাণ ঝড়ে যায়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক নেতা আহত হন। গুরুতর আহতের মধ্যে নাসিমা ফেরদৌসী একজন।
তিনি সেই স্মৃতির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘কোথাও যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। মনে হচ্ছিল যেন, চারদিকে ধোঁয়া ও আগুনের ফুলকি। নেত্রীর বক্তব্য শুরু হওয়ার প্রাক্কালে গ্রেনেড হামলা শুরু। এরই মধ্যেই আমি বুঝতি পারি আমর শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। শরীর থেকে ঝরছে রক্ত। চারদিকে তাকিয়ে দেখি সবারই একই অবস্থা। এরপর কখন যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি তা বুঝতেই পারিনি। ’
‘অজ্ঞান অবস্থায় মৃত্যু ভেবে তোলা হয়েছিল লাশের ট্রাকে। কিন্তু নড়েচড়ে ওঠার পরে পুলিশ আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। ফেলে রাখা হয়, হাসপাতালের করিডোরে। একজন মানুষ এসে আমার কাছে আত্মীয়-স্বজনের মোবাইল নম্বর চাইল। ছেলের মোবাইল নম্বর দেবার পরে তার সঙ্গে যোগোযোগ করল। এরপর আর কিছুই মনে নেই। ’
নাসিমা ফেরদৌসী বলেন, ‘দুই পা বিকল হওয়ায় চার বছর শয্যাশায়ী ছিলাম। চার মাস সারা শরীরে স্পঞ্জ লাগানো ছিল। এরপর হুইল চেয়ার, স্ট্রেচার এবং ওয়াকারের মাধ্যমে হাঁটা শেখানো হয়। লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটতে হয়। এতো যন্ত্রণা, এতো কষ্ট; হাঁটতে কষ্ট, শুইতে কষ্ট, এতো অশান্তির মাঝেও সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছি। মারা গেলে আজ হয়তো অনেক বছর হতো। পৃথিবীর আলো-বাতাস আর দেখতে পেতেন না। ’
মাঝে মধ্যে তিনি অবাক ও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। কখনো কখনো ঘরে থাকা সেই দুঃসহ স্মৃতির ছবি দেখে সময় কাটান। নিজের ছবি দেখে নিজেকে সামলাতে পারছে না নাসিমা ফেরদৌসী।
তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে সব সময় নারীদের পাশে থাকব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের অধিকার ও দুস্থ নারীদের সহযোগিতা করার লক্ষ্যে কাজ করছি। গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচার হলে আত্মার শান্তি পাবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৮
জিপি