তবে একমাত্র অবলম্বন বড়ভাইকে ছাড়া ঈদটা যেনো তাদের কাছে বিষাদময়। তাই হয়তো বাড়ি থেকে কোথাও বের হতে চাইছেন ছোট দুই ভাই মেহেদি ও আব্দুল্লাহ।
রাজীবের ছোট দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় মেহেদি হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ভাইকে ছাড়া দিন কাটবে তা কখনো ভাবিনি, তারপর আবার ঈদ। নানা বাড়িতে এসেই মনের টানেই ভাইয়ের কবরের পাশে ছুটে গেছি দুইভাই। চোখের পানি ছাড়া আমাদের আর কি-ই বা ভাইকে দেওয়ার আছে। কবরটি চিফ হুইপের বাঁধিয়ে দেওয়ার কথা ছিলো তাও দেননি। ভাইয়ের নাম দিয়ে বাড়ির সামনের রাস্তাটা পাকা হওয়ার কথা ছিলো তাও হয়নি।
বিগত সময়ে কোরবানির কথা স্মরণ করে মেহেদি বলেন, ভাই থাকলে তো কতো মজা হতো। আমাদের সঙ্গে নিয়েই রাজীব ভাই বাড়িতে আসতেন। মামাদের সঙ্গে কোরবানির পশু জবাই করতেন, কাটাকাটি করতেন। আমাদের সবাইকে নিয়ে বেশ আনন্দ করতেন। গতবারও করেছেন, কিন্ত এবছরে কোরবানির ঈদ ঠিকই এলো তবে ভাই ছাড়া ঈদের সময়টা শুধুই আমাদের মধ্যে নিস্তব্দতা এনে দিয়েছে।
আরো পড়ুন>>
** কান্না-স্মৃতিতে দিয়ার পরিবারের ঈদ
বাবা-মাকে হারানোর পরও বড় ভাই রাজীব থাকায় কোনদিন বুঝিনি তাদের অভাব। কিন্তু আজ ভালোবাসার সেই মানুষকে দেখতে পারছি না। ভাই মাছের লেজের অংশ খেতে বেশ মজা করতো, আমরা ছোট দুই ভাই মজা করে বলতাম, ‘ভাই তুমি মাছের লেজ যেভাবে খাও গরুর লেজও তোমাকে খেতে হবে’। ভাই কতো হেঁসেছে, এসব কথায় কিন্তু আজ আর হাসবে না, আসবেনা আমাদের কাছে। একসঙ্গে ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করা হবে না। মামি-খালাদের হাতের রান্না মজা করে তাকে নিয়ে আর খাওয়া হবে না। গরু কাটা নিয়ে ছোটাছুটি আর হবে না।
তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণির ছাত্র হাফেজ মো. মেহেদী হাসান (১৫) বেশ কষ্টেই দিন কাটাচ্ছেন জানিয়ে বলেন, রাজীব ভাই বেঁচে থাকার সময় নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি আমাদের ছোট দুই ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতেন। মামা-খালার পাশে রয়েছি বিধায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছি। ভাইয়ের স্বপ্ন পূরণের কথা মাথায় রেখে খুব কষ্টে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা চালাতে হচ্ছে। আমার সঙ্গে এখন ছোট ভাই মো. আব্দুল্লাহ (১৪) থাকে (৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র)।
রাজীবের বড় মামা জাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সবকিছু কেমন যেনো এলোমেলো হয়ে গেছে, আমাদের পরিবারে রাজীব ছিলো একটা প্রাণ, একটা ভালোবাসার মানুষ। রাজীবের ছোট দুই ভাই গত শনিবার ঢাকা থেকে বাউফল এসে পৌঁছেছে। সঙ্গে আমার বোন খাদিজা বেগম লিপি ও হ্যাপি এসেছে। তারা সবাই এখানে থাকবে এ মাসের শেষ পর্যন্ত।
তিনি বলেন, আজ এসে আমি বাড়িতে পৌঁছে যখন চারদিকটা দেখছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো না এ বাড়িতে কেউ আছেন। রাজীব থাকলে তো এগিয়ে আসতো। কথো কথা বলতো।
কোরবানির জন্য গরু ভাগে ঠিকই কেনা হয়েছে, কিন্তু এবার কাটাকাটি আমাদের করতে হবে, রাজীব থাকলে সেই করতো সব। ও যেমন আবেগময় ছিলো তেমনি বিশাল আগ্রহ ছিলো ঈদ-কোরবানি নিয়ে যেকোন কাজ করতে। সারাজীবন ওকে মিস করতে হবে।
তিনি জানান, রাজীবের মৃত্যুর পর অনেকে এগিয়ে এসেছেন, অনেকে অনেক আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এখন আর আমাদের খোঁজ রাখেন না তারা, আমাদের না হোক ওদের দুই ভাইয়ের খোঁজ তো রাখতে পারতেন। মামলার তদন্ত চলছে ভবিষ্যতে কি হবে তাও জানি না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৮
এমএস/জেডএস