ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

নামাজ পড়ে নিজ দেশে ফেরার দোয়া করেছি 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৮
নামাজ পড়ে নিজ দেশে ফেরার দোয়া করেছি  ঈদের নামাজ আদায় করছেন রোহিঙ্গারা-ছবি-বাংলানিউজ

কক্সবাজার: ঈদের নামাজ শেষে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে চোখের জল বিসর্জন দিয়েছে রোহিঙ্গারা। গেল বছরের ঈদুল আজহার সময় নিজ দেশের সেনাবাহিনীর হাত থেকে জীবন বাঁচাতে মাতৃভূমি ছেড়ে পালাতে হয় তাদের। তাই আদায় করতে পারেনি ঈদের নামাজ। পায়নি মাংসের স্বাদ। কিন্তু এবার আশ্রিত হিসেবে থেকেই আদায় করেছে ঈদের নামাজ, ভাগ্যে জুটেছে কোরবানির মাংস। এতে যেমন তাদের মুখে হাসি ফুটেছে তেমনি নিজ দেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতন, ফেলে আসা মাতৃভূমির স্মৃতি কাঁদিয়েছে।

কুতুপালং-৫ এর একটি মসজিদের ঈমাম মওলানা সাইদুর রহমান বলেন, নামাজ শেষে বাংলাদেশ ও এদেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করেছি। নিজ মাতৃভূমির কথা ভেবে চোখের জল ফেলেছি।

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি যাতে স্বসম্মানে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে।  দোলনায় দুলছে শিশু।                                          ছবি: বাংলানিউজএ বিষয়ে কুতুপালং ‘ডি’ ব্লকের নূর আহমদ মাঝি বলেন, গেল বছরের কোরবানির সময় আমরা মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে এপারে এসেছি। রাখাইন সেনার নির্যাতন থেকে বাঁচতে সেসময় আমাদের কেউ পাহাড়ে, কেউ সাগরে, আবার কেউবা সীমানায় অবস্থান নিয়েছিলাম। পালাতে গিয়ে আমাদের অনেকেই হারিয়েছেন বাবা-মা, কেউ আদরের সন্তান। কারও বোন কিংবা স্ত্রী কিংবা মা হয়েছে ধর্ষণের স্বীকার। সেসময়ের কথা মনে করে এবারের ঈদের নামাজের পর আমরা অঝোরে কেঁদেছি। প্রার্থনা করেছি যেন আমরা স্বসম্মানে নিজ দেশে ফিরতে পারি।

উখিয়ার কুতুপালং মধুরছড়ার ‘ই’ ব্লকের মাঝি মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, রাখাইনে সবই ছিল আমার। কিন্তু আজ নিঃস্ব। তারপরও গত বছরের তুলনায় এবছর ভালোভাবে ঈদ করেছি। নামাজ আদায় করেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাংস দিয়েছে। এভাবেই কেটে গেল প্রথম দিন।

কুতুপালং-৪ ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মাঝি মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, গত বছর কোরবানির ঈদের নামাজ আদায় করতে পারিনি। সেসময় রাখাইনের একটি জঙ্গলে ছিলাম। এখানে নামাজ পড়তে পেরেছি।  নাগরদোলায় দুলছে শিশুরা।  ছবি: বাংলানিউজটেকনাফের নয়াপড়া আনরেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শফিক মাঝি বলেন, মোনাজাতের সময় উপস্থিত কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি।  নিজ দেশে আমরা মা, বাবা, ভাই বোন, স্ত্রী, ছেলে মেয়েসহ স্বজনদের হারিয়েছি। কবরে পড়ে রয়েছে আমার মা। অন্তত তাদের জন্য হলেও কিছু একটা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কারণ, একবছর হয়ে যাচ্ছে আমরা বাংলাদেশে এসেছি। এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা আমাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

এদিকে ঈদ উপলক্ষে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়। নাগরদোলাসহ নানা স্থানে মেলার আয়োজন করা হয়।

এ বিষয়ে বালুখালীর রোহিঙ্গা শিশু সাবেকুন্নাহার বলেন, ঈদ সালামি হিসেবে স্বজনরা আমাকে ১শ’ টাকা দিয়েছে। এই টাকা নিয়ে মেলায় এসেছি। দোলনায় চড়েছি, আইসক্রিম, বুট, চানাচুর খেয়েছি। বন্ধুদের সঙ্গে অনেক মজা করেছি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, উখিয়ার ৩০টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত ১ হাজার ২০টি মসজিদ ও ৫৪০টি নূরানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মক্তব), টেকনাফের নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঁচটি, অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২৪৫টি মসজিদ ও ২০টি নূরানি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন রোহিঙ্গারা।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৮
টিটি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।