একদমেই কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহ শহরের একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার। তার এই কথাতেই উঠে এসেছে ঈদের অনাবিল আনন্দের মধ্যে শহরের রেস্টুরেন্ট ব্যবসার প্রকৃত চিত্র।
বৃহস্পতিবার (২৩ আগস্ট) রাতে শহরের গাঙ্গিনারপাড় এলাকার রি-ইট নামের একটি রেস্টুরেন্টে বসে আলাপ হচ্ছিল এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে।
শুধু সুমাইয়াই নন, কফি হাউজ বা রেস্টুরেন্টগুলো এদিন নানা বয়সী মানুষের আড্ডায় মুখর ছিল। আনন্দ উদ্দীপ্ত যেসব শহরবাসী বৃষ্টির বাঁধায় ব্রক্ষপুত্র নদঘেঁষা জয়নুল উদ্যান কিংবা বিপিন পার্কে যেতে পারেননি বিকেল থেকেই তারা রিকশা, গাড়ি বা মোটরবাইক চেপে ভিড় করেছেন রেস্টুরেন্টে।
আবার খরতাপ উপেক্ষা করে যারা দুপুরেই প্রিয়জনকে নিয়ে বুকভরে নিশ্বাস নিতে জয়নুল উদ্যানে গেছেন তাদের উপস্থিতিতে সরগরম ছিল সেখানকার সারিন্দা রেস্টুরেন্ট।
এখানেই লাচ্চি, পানীয় বা কফির কাপে চুমুক দিয়ে মুখরোচক নানা খাবারে ডুবে থাকার পাশাপাশি আড্ডাতেও মেতে উঠতে দেখা গেছে উদ্যমী তরুণ-তরুণীদের।
জানা গেছে, প্রায় এক দশক আগে ময়মনসিংহে খুব একটা জনপ্রিয় ছিল না রেস্টুরেন্ট বা ফাস্ট ফুড সংস্কৃতি। তবে দিনবদল আর পালাবদলের পালায় ক্রমশ জনপ্রিয় হতে শুরু করে এই সংস্কৃতি।
তারুণ্যের চাহিদাকে উপজীব্য করে গড়ে ওঠে একাধিক রেস্টুরেন্ট বা ফাস্ট ফুড শপ।
এর মধ্যে সারিন্দা, রোমথ্রি, ধানসিঁড়ি, বেস্ট বাইট, রি-ইট, সরগরমসহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট বা ফাস্ট ফুডের দোকানে প্রায় সব সময়েই তরুণ বা সব বয়সী মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
দেখা গেছে, ঈদকে ঘিরে শহরের বেশিরভাগ রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকলেও বিশেষ ব্যবস্থায় কয়েকটি রেস্টুরেন্ট বা ফাস্ট ফুডের দোকান খোলা থাকে। ঈদের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা অবধি ক্রেতার কথা মাথায় রেখেই এসব রেস্টুরেন্টে তৈরি হয় আলাদা মেন্যু।
শহরের জয়নুল উদ্যান পার্ক সংলগ্ন সারিন্দা রেস্টুরেন্টের এক কর্মচারী বাংলানিউজকে জানান, গরম হওয়ায় ঈদের দ্বিতীয় দিনে ধুম বিক্রি হয়েছে লাচ্চি ও কোমল পানীয়। এর পাশাপাশি কফির কাপ হাতেও আড্ডায় মেতে উঠেছে তরুণ-তরুণীদের দল। অন্যদিন এখানে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যবসা হলেও এদিন তা দ্বিগুণ ছাড়িয়েছে।
শহরের গাঙ্গিনারপাড় এলাকায় নামিদামি সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকলেও ডে-নাইট যেন ঈদের আনন্দই ছুঁয়ে গেছে এই রেস্টুরেন্টকে। থাই সোপ, চিকেন ফ্রাইড রাইস, তন্দুরি রাইস, মেক্সিকান মাশালা, চিস পাশতা ও নুডলস আইটেম ছিল আগন্তুকদের পছন্দের তালিকায়।
ঈদের দ্বিতীয় দিন হওয়ায় রাতেও এই রেস্টুরেন্টে ছিল জমাট ভাব। দলবেঁধে এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়ানো শেষে পরিবার বা প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ঠিকই খাওয়ায় ডুবেছেন অনেকেই।
ফলে অন্যদিন গড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা ব্যবসা করলেও এদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বিক্রি করেছে রেস্টুরেন্টটি, এমনটিই জানান সংশ্লিষ্টরা।
দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে অর্ডার সার্ভের বিষয়ে জানতে চাইলে রি-ইট নামের এই রেস্টুরেন্টের স্বত্ত্বাধিকারী মাহাবুবুল আলম রিপন বাংলানিউজকে জানান, স্বাভাবিকের তুলনায় এখন চাপ বেশি। হুট করেই তাদের (ক্রেতাদের) পছন্দমতো খাবার তৈরি সম্ভব নয়। এজন্য সময়ের প্রয়োজন হয়। এরপরও আমরা চেষ্ট করেছি সার্ভিস দিয়ে ক্রেতাদের তুষ্ট করতে। আমরা ইচ্ছা করে খাবার তৈরিতে দেরি করিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৮
এমএএএম/আরআর