ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বাড়তি উদ্যোগেই ঝকঝকে-তকতকে ডিএনসিসি

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৮
বাড়তি উদ্যোগেই ঝকঝকে-তকতকে ডিএনসিসি

ঢাকা: কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে বিশেষ দক্ষতা দেখিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। সাড়ে ৯ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রমেই ঝকঝকে হয়েছে ডিএনসিসির প্রায় প্রতিটি রাস্তা।

ঈদের দিন দুপুর ২টা থেকে কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়। অপসারণ করা হয় মোট ৮ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য।

ফলে ডিএনসিসি’র আওতাধীন এলাকার কোথাও কোরবানি পশুর বর্জ্য তেমন একটা চোখে পড়েনি।  

শুক্রবার (২৪ আগস্ট) নগরীর বনানী, গুলশান ও মিরপুরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে কোথাও কোরবানির বর্জ্য চোখে পড়েনি। শুধু ভিআইপি এলাকা নয় অন্যান্য স্থানও ছিল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।

কল্যাণপুর এলাকার ১১ নম্বর সড়কের এলাকাবাসীরা জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। বর্জ্য ফেলার জন্য ব্যাগও দেওয়া হয়েছে ডিএনসিসি’র পক্ষ থেকে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়েছে। কোরবানির পশু জবাইয়ের স্থানে ছিটানো হয়েছে স্যাভলন মেশানো পানি।

কল্যাণপুর ১১ নম্বর সড়কের বাসিন্দা সৌরভ হোসেন বলেন,  সিটি কর্পোরেশন ব্যাপক উদ্যোগে এলাকা পরিষ্কার করেছে এবং বিষয়টি আমাদের খুবই ভালো লেগেছে। নানা ধরনের কাজে সহায়তা দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। ব্লিচিং পাউডার ও স্যাভলনের পানি ছিটিয়েছে এবং কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করেছে।
কল্যাণপুর ১১ নম্বর রোড।  ছবি: বাংলানিউজ
পল্লবী, মিরপুর-১০ ও মিরপুর ৬০ ফুট এলাকায়ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখা গেছে। পশু জবাই দেওয়ার স্থানগুলোতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়েছে।

মিরপুর-৬০ ফুট এলাকায় কথা হয় মিজানুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন,  আমরা এক স্থানে একসঙ্গে ১২টা কোরবানির গরু জবাই করেছি। কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কারে সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। প্রচারণা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় উপকরণ আমরা পেয়েছি। এবারই প্রথম স্যাভলন মিশ্রিত পানিও ছিটানো হয়েছে। ফলে রোগ জীবাণু ছড়ানোর সম্ভাবনা কম। তবে আমাদের চারপাশ যদি নিজেরাই পরিচ্ছন্ন রাখি তবে পুরো শহরের চিত্রই পালটে যাবে। তাই সরকারের পাশাপাশি আমাদের নিজেদেরও সচেতন হওয়া উচিত।

ডিএনসিসি সূত্র জানায়, কোরবানির পশু জবাই করার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এ বছর ৫৪৯টি স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে।  জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য ৩ লাখ ৬৫ হাজার লিফলেট বিতরণ এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি মসজিদের ইমাম সাহেবদের মাধ্যমে নামাজের পরে ও জুমা’র খুতবার সময় কোরবানি পশু জবাই ও বর্জ্য অপসারণ বিষয়ে মুসুল্লিদের বুদ্ধি পরামর্শ দেওয়া হয়। তাছাড়া রেডিও, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে ডিএনসিসি’র পক্ষে।

কোরবানির ঈদের আগে ৫টি গাড়ির সাহায্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করা হয়।

ডিএনসিসি’র নিজস্ব বর্জ্যবাহী ট্রাক, ভারী যন্ত্রপাতি ও ওয়াটার বাউজারের পাশাপাশি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অতিরিক্ত ট্রাক বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত করা হয়। ঈদ উপলক্ষে বর্জ্য পরিবহন সক্ষমতা কমপক্ষে ১০ হাজার টনে উন্নীতকরণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়োজিত ছিল। ঈদের আগের দিন থেকে ঈদের পরবর্তী ২ দিন নিরবচ্ছিন্নভাবে বর্জ্য অপসারণের জন্য বর্জ্যবাহী ট্রাক ১৫০টি, পে-লোডার ৫টি, হুইল ডোজার ৩টি, বেকহো লোডার ৪টি, স্কিপ লোডার ৪টি, ডাম্প ট্রাক ১৯টি এবং পানির গাড়ি ১১টি নিয়োজিত ছিল। আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে আরও ৮০টি ট্রাক কাজ করেছে।

কোরবানির পশুর বর্জ্যে যেন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে পশু জবাইয়ের স্থানে ১১টি ওয়াটার বাউজারের মাধ্যমে তরল জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি স্প্রে করা হয়। প্লাস্টিকের ব্যাগ, ব্লিচিং পাউডারসহ বিভিন্ন উপকরণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এরমধ্যে রয়েছে বর্জ্য অপসারণের জন্য প্লাস্টিকের ব্যাগ ৪ লাখ, ব্লিচিং পাউডার ৪০ হাজার কেজি, তরল জীবাণুনাশক ১ হাজার লিটার, ফিনাইল ২০০ লিটার।
মিরপুর ৬০ ফুট সড়ক।  ছবি: বাংলানিউজ
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের কোরবানির ঈদের প্রস্তুতি কয়েক মাস আগে থেকে নেওয়া হয়।  

ডিএনসিসি’র সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আনিচুল হক বাংলানিউজকে বলেন, যতো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব সবই এবার নেওয়া হয়েছে। স্যাভলন মেশানো পানির গাড়ি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আগেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। আমাদের সব কর্মী রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করেছে বলেই এমন সফলতা পাওয়া গেছে। সামনের বছরে আরও আধুনিক উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আশা করি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৮
এমআইএস/এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।