এবছর ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে। ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট রাতে তথাকথিত আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) মিয়ানমারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার পরদিন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য করা হয় রোহিঙ্গাদের।
বাংলাদেশে এখন ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এখনও প্রতিদিনই কিছু না কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে নিপীড়নের মুখে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে আরও প্রায় সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গা।
সেনাবাহিনী অভিযান এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে শরণার্থীদের ফেরত নিতে সম্মত হয় মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের ঘরে ফেরার পথ তৈরি করতে গত বছর ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোয় দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীদের বৈঠকে প্রথমবারের মতো ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গা নাগরিকের তালিকা মিয়ানমারকে হস্তান্তর করা হয়। সেই তালিকা এখন যাচাই-বাছাই করছে মিয়ানমার। তবে রোহিঙ্গাদের ফেরত না নিয়ে কেবল সময়ক্ষেপণই করছে মিয়ানমার।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নস্যাৎ করতে মিয়ানমার শুরু থেকেই নানা অপকৌশল নিয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভুল বার্তা দিয়ে আসছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ আন্তরিক নয় বলে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে মিয়ানমার। এর আগেও মিয়ানমার অভিযোগ করেছে, ত্রাণ সহায়তা পাওয়ার জন্যই বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকট জিইয়ে রাখতে চায়। অবশ্য বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতায় মিয়ানমারের এসব অভিযোগ ধোপে টেকেনি।
সর্বশেষ মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি গত ২১ আগস্ট সিঙ্গাপুরে দেওয়া এক বক্তব্যে বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন কবে থেকে শুরু হবে সেটা নির্ভর করছে বাংলাদেশের ওপর। ’ মিয়ানমারের নেত্রীর এই বক্তব্যের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে দেশটির আন্তরিকতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
মিয়ানমার এর আগে একাধিকবার রোহিঙ্গা সংকটের দায়ভার নানাভাবে বাংলাদেশের ওপর চাপাতে চাইলেও সেটা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের পক্ষে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমর্থন থাকায় তারা সুবিধা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য হয় মিয়ানমার। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তির পর এই সংকট থেকে উত্তরণ সহজ হবে বলে মনে করেছিলো বাংলাদেশ। তবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের দায় বার বার বাংলাদেশের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে মিয়ানমার। তবে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে আশাবাদী।
রোহিঙ্গা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতির বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন, কোনো চ্যালেঞ্জ সমাধানের অযোগ্য নয়। সদিচ্ছা থাকলে সব চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণ হওয়া যায়। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করছি।
বাংলাদেশ সময়: ০০০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৮
টিআর/আরআর