এখানে রয়েছে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঐতিহাসিক মুলফৎগঞ্জ মাদ্রাসা ও মসজিদ কমপ্লেক্স, কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কেদারপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও বিমা অফিস, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ৫ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
পদ্মার আগ্রাসী থাবায় কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে গুরুত্বপূর্ণ এই বাজারটি।
ভাঙনের মুখে মূলফৎগঞ্জ বাজারের ৪তলা বিশিষ্ট দেওয়ান ক্লিনিক অ্যান্ড কম্পিউটারাইজড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, লাইফ কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনসহ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
হুমকির মুখে রয়েছে ঐতিহাসিক মুলফৎগঞ্জ মাদ্রাসা কমপ্লেক্স ভবন, দু’টি প্রাথমিক স্কুল ও ৫ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ পুরো মুলফৎগঞ্জ বাজার।
এছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে নড়িয়া উপজেলা শহর, নড়িয়া পৌরবাজার, পৌর ভবন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, নড়িয়া সরকারি খাদ্য গুদাম, নড়িয়া সরকারি কলেজ, নড়িয়া বিএল উচ্চ বিদ্যালয়, নড়িয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সহ অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক-বীমা অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পুরনো ঐতিহ্যবাহী সহস্রাধিক স্থাপনা।
গত ১৮ আগস্ট মুলফৎগঞ্জ বাজার সংলগ্ন গাজী কালুর মেহমানখানা নামে ৫ তলা বিশিষ্ট প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বিলাসবহুল একটি বাড়ি, খান বাড়ি জামে মসজিদ ও দিলু খার দ্বিতল পাকা বাড়ি একসঙ্গে পদ্মার গর্ভে চলে যায়। ভাঙনের মুখে হজরত খাজা মইনুদ্দিন গাজী কালু মঞ্জিল নামে চারতলা বিশিষ্ট আরেকটি বিলাসবহুল বাড়ি ভেঙে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওইদিন থেকে এ পর্যন্ত নড়িয়া-মুলফৎগঞ্জ সড়কের কয়েকটি পয়েন্টে প্রায় ৩শ’ মিটার এলাকা পদ্মায় বিলিন হয়ে নড়িয়া-মুলফৎগঞ্জ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সাধুর বাজার, কেদারপুর, বাঁশতলা, চরজুজিরা, সেহেরআলী মাদবর কান্দি বিলীন হয়ে গেছে কিছুদিন আগে।
এর আগে গত ৭ আগস্ট দুপুরে হঠাৎ করে মুলফৎগঞ্জ বাজার সংলগ্ন লঞ্চঘাটের বিস্তৃর্ণ এলাকা ধসে গিয়ে ৩০ জন লোক পদ্মায় তলিয়ে যায়। এদের মধ্যে নিখোঁজ হয় ৯ জন। নিখোঁজের ৭ দিন পর চাঁদপুর সীমান্ত এলাকা থেকে ২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা গেলেও বাকিদের এখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। ভাঙন আতঙ্কে দিশেহারা পদ্মা পাড়ের মানুষ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। তিন সহস্রাধিক মানুষ তাদের সাজানো ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। খোলা আকাশের নিচে অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। ভাঙন কবলিতদের আহাজারিতে ভারি হচ্ছে পদ্মার পাড়। পদ্মার আগ্রাসী রূপ দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজারো মানুষ। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এদিকে পদ্মার ভাঙন থেকে নড়িয়া উপজেলা শহরকে বাঁচাতে গত ১১ জুলাই থেকে ভাঙন এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এ পর্যন্ত বালু ভর্তি লক্ষাধিক জিও ব্যাগ নদীতে ফেলা হয়েছে। কিন্তু তীব্র স্রোতের কারণে কিছুতেই ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা ইয়াসমিন বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে নড়িয়া উপজেলা শহর। ইতোমধ্যে নড়িয়ার মানচিত্র থেকে নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে বিস্তৃর্ণ জনপদ, বসতবাড়ি, গাছপালাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। উদ্বাস্তু হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। ভাঙনের শিকার মানুষগুলোর তালিকা তৈরি করে আমরা সরকারিভাবে যথাসাধ্য সাহায্য সহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৮
আরএ