ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মাঘ ১৪৩১, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অবশেষে মায়ের কোল পেলো সেই নবজাতক

ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৮
অবশেষে মায়ের কোল পেলো সেই নবজাতক মা ও শিশু স্পেশালাইজড হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছে নবজাতকটি

কুমিল্লা: অবশেষে মায়ের কোল পেলো কুমিল্লার মা ও শিশু স্পেশালাইজড হসপিটালে চিকিৎসাধীন সেই নবজাতক। জন্মের পর চিকিৎসা করাতে এনে মাত্র ছয় দিনে প্রায় লাখ টাকা বিল দেখে পালিয়ে গিয়েছিলেন শিশুটির বাবা শাহ্ আলম ও মা রোকেয়া বেগম। কিন্তু প্রশাসন-হাসপাতাল কর্তৃপক্ষসহ সবার সহযোগিতায় ন্যূনতম একটি অংকের বিল পরিশোধের মাধ্যমে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তার বাবা-মা।

বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) এ দম্পতি শিশুটিকে বুঝে নিতে তাদের চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের ফুলছোঁয়া গ্রামের বাড়ি থেকে কুমিল্লায় আসেন। হাসপাতালের বিল ৯৭ হাজার ৩৯৯ টাকা হলেও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে শাহ্ আলম-রোকেয়া বেগম দম্পতি সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় কেবল অক্সিজেন বিল শোধের মাধ্যমে তাদের সন্তানকে বুঝে পান।

১৮ আগস্ট হাজীগঞ্জ শহরের শাহ মিরান হসপিটালে সিজারের মাধ্যমে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন রোকেয়া বেগম। মাত্র ৭০০ গ্রাম ওজনের অপরিণত নবজাতককে বাঁচাতে দ্রুত কুমিল্লার মা ও শিশু স্পেশালাইজড হসপিটালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে ছয় দিন শিশুটিকে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (এনআইসিইউ) রাখা হলে শিশুটির জন্য চিকিৎসা খরচ গিয়ে দাঁড়ায় ৯৭ হাজার ৩৯৯ টাকা। দরিদ্র বাবা এ অর্থ পরিশোধ করতে না পেরে নবজাতককে হাসপাতালের বেডে রেখেই ২৪ আগস্ট পালিয়ে চাঁদপুরে চলে যান। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ  থানায় জিডি করে।

>>>আরও পড়ুন...হাসপাতালের বিল শোধ করতে যাচ্ছেন সেই নবজাতকের বাবা-মা

এ নিয়ে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-সহ বিভিন্ন অনলাইন নিউজপোর্টাল ও পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হলে সবার নজরে আসে হৃদয়বিদারক ঘটনাটি। তৎপর হন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর, জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান। এরপর তারা হাসপাতাল পরিদর্শন করেন এবং আলোচনা করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অক্সিজেন ছাড়া সকল প্রকার বিল মওকুফের ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলন করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা 

হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটওয়ারী বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমি জানতে পেরে কুমিল্লার ওই হাসপাতালে যোগাযোগ করি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করলে ছাড়পত্র দেবে বলে আমাদের জানায়। এরপর আমরা শিশুটির বাবা-মাকে ৩০ হাজার টাকা দিই হাসপাতালের বিল পরিশোধ করার জন্য।

জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অপরিণত এবং স্বল্প ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া নবজাতকের সুস্থ হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসার ব্যয়ভারসহ সব প্রকার সহযোগিতা দেওয়া হবে। পুলিশ সুপার এরইমধ্যে ওই শিশুর মায়ের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন।  

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর বাংলানিউজকে বলেন, ভালো লাগছে। সবাই মানবিক আচরণ করেছে। মা তার সন্তানকে ফিরে পেয়েছে । এভাবে সবাই মানবিক হলে কোনো সন্তান আর কষ্ট পাবে না। কোনো সন্তানের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে না পেরে আর কোনো মা-বাবাও উধাও হবেন না। আমাদের সবাইকে মানবিক হতে হবে। এছাড়া পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম নবজাতকটির নাম রেখেছেন দৃষ্টান্ত।

কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা বেশ আনন্দিত। সন্তানের কাছে ফিরে এসেছে তার মা। শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ব্যয়ভার বহন করবে। এছাড়া কোনো বিত্তবান ব্যক্তি যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, তাকে স্বাগত জানানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৮
এনটি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।