দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা চলমান থাকলেও সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন নজরদারি নেই। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, যানজট নিরসনে তারা জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
সরেজমিনে বেনাপোল স্থলবন্দর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বন্দর এলাকায় বেনাপোল-যশোর মহাসড়কে দিন-রাত আমদানি পণ্যে যানজট লেগে আছে। বন্দর অভ্যন্তরে আমদানিপণ্য রাখার জায়গা না থাকায় আমদানি করা চেসিসগুলো মহাসড়ক দখল করে এমনভাবে পার্কিংয়ে রাখা হয়েছে যে অন্য কোনো যানবাহন চলার অবস্থা নেই। বন্দর থেকে আমদানিপণ্য খালাস নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক ও ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারী যাত্রীবাহী সোহার্দ্য পরিবহনগুলো যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে। ব্যস্ততার কারণে বাধ্য হয়ে ছোট যানবাহন ইজিবাইক ও বাইকগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলছে ফুটপাতের উপর দিয়ে। কয়েক বছর ধরে বেনাপোল বন্দরে যানজটের এই ভয়াবহ অবস্থা।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক বাংলানিউজকে জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দেশে স্থলপথে যে পণ্য আমদানি-রফতানি হয় তার ৭৫ শতাংশ পণ্য বেনাপোল বন্দর দিয়ে হয়। মাত্র পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে একটি পণ্য চালান ভারতের কলকাতা থেকে পেট্রাপোল স্থলবন্দর হয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরে প্রবেশ করতে পারে।
তেমন একই সময়ে বেনাপোল বন্দর থেকে বাংলাদেশি রফতানি পণ্য নিয়ে ট্রাক পৌঁছায় কলকাতায়। এ কারণে এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি ব্যবসায়ীদের। প্রতিবছর এ বন্দর থেকে সরকার প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বেনাপোল বন্দরে রাস্তা-ঘাট সমস্যায় মারাত্মকভাবে বাণিজ্য ব্যাহত হলেও কর্তৃপক্ষের যেন গরজ নেই।
বেনাপোল মরিয়ম মেমোরিয়াল বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হাসিনা খাতুন ডালিম জানান, বন্দর সড়কে ভয়াবহ যানজটের কারণে তাদের শিক্ষার্থীরা সময়মতো স্কুলে আসতে পারে না। সড়কে এমন অবস্থা সারাক্ষণ তাদের নিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকতে হয়। বেনাপোল শ্যামলী পরিবহনের ম্যানেজার গিয়াস উদ্দিন জানান, বেনাপোল থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা। কিন্তু বেনাপোল বন্দরে যানজটে আটকে থাকতে হয় দুই থেকে তিন ঘণ্টা। এতে তারা যাত্রীদের সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারেন না।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বন্দরের ধারণক্ষমতা ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু এখানে সার্বক্ষণিক আমদানি পণ্য থাকে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। বন্দরে স্থান সংকটের কারণে আমদানি পণ্য নিয়ে খালাসের অপেক্ষায় ট্রাকগুলো দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকছে। এতে আমদানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়ে কেউ এ পথে আমদানি বন্ধ করে দিচ্ছেন, আবার কেউ অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ের উপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। চলতি অর্থবছর এ বন্দরে ১৮৪ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন হলে বর্তমানে যে রাজস্ব আদায় হচ্ছে তখন তার দ্বিগুণ হবে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) আমিনুল ইসলাম জানান, যানজট নিরসনে তারা জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের সঙ্গে একাধিকবার তাদের বৈঠক হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শেষ হলে অনেকাংশে যানজট নিরসন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৮
এএ