মনোবিজ্ঞান বিভাগের একাডেমিক সভায় (২২ জুলাই) এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তার ক’দিন আগেই বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসরীন ওয়াদুদ রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দিয়েছেন মীর ফখরুজ্জামানের সাফাই গেয়ে। এমনকি তিনি স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন বলেও দাবি করা হয় ১৭ জুলাই পাঠানো চিঠিটিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, ‘মীর ফখরুজ্জামান সম্পর্কে কিছু জরুরি কথা’ শিরোনাম দিয়ে লেখা চিঠিতে বলা হয়, ‘ড. মীর ফখরুজ্জামান মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন (১৯৬৫)। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পক্ষে অনেক কাজ করেছেন। অনেক হিন্দু ছাত্র আর শিক্ষক (ড. পূর্ণ চন্দ্র দত্ত) তার আশ্রয়ে ছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তার উদারতা ও জনপ্রিয়তাকে পছন্দ করেনি। তার নামে কালিমা লেপণ করার জন্য তাকে স্বাধীনতাবিরোধী চিহ্নিত করে দালাল আইনে হাইকোর্টে কেস দেয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয় তার কাজ স্থগিত করলেও কেসে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন এবং পরে বিভাগে চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল হন। ’
চিঠির শেষ অংশে লেখা হয়, ‘তাকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য সেসব কাগজপত্রগুলো প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ’ এই কাগজগুলো সরবরাহ করে মনোবিজ্ঞান বিভাগের উপকার করার কথাও বলা হয় চিঠিতে।
অথচ বিভাগের একাডেমিক সভায় ঘটে তার ঠিক উল্টো। চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাসরিন ওয়াদুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়, অধ্যাপক মীর ফখরুজ্জামান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধী কার্যকলাপে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে তাকে ১৯৭২ সালে গ্রেফতার করা হয়। স্বাধীনতায় বিরোধিতার কারণে মীর ফখরুজ্জামানের নামফলক মুছে ফেলা, তার নামে থাকা ট্রাস্ট ফান্ড বাতিল ও গবেষণাগারের নামও পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়। তখন বিভাগের সকল শিক্ষক এতে সম্মতি দেন।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসির ওয়াদুদ প্রথমে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। পরে জানান, বিভাগের অধিকাংশ শিক্ষকের মত একরকম হলেও তিনি নিজে ‘চিঠিতে লেখা তথ্যের পক্ষে’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এনামউজ্জামান চিঠিপ্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এটি সংশ্লিষ্ট শাখাকে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে এখনো অবহিত হইনি। বিষয়টি দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
১৯৬৫ সালে মাস্টার্স প্রোগ্রামের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়। এরপর ১৯৬৭ সালে তিন বছর মেয়াদী অনার্স কোর্স চালু হয় বিভাগটিতে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮
এসকেবি/এইচএ/
** স্বাধীনতাবিরোধীর নামফলক মুছে ফেলবে ঢাবি