স্থানীয়রা জানান, আত্মপরিচয় সন্ধানে পাবনার অলি-গলি পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এ ভিনদেশি মিন্টো ও এনিটি দম্পতি। জনে জনে লিফলেট দিয়ে কিছু একটা জিজ্ঞেস করছেন।
মিন্টোর বিলি করা লিফলেট থেকে জানা যায়, ১৯৭৭ সালে ছয় বছর বয়সে পাবনার নগরবাড়ি ঘাটে হারিয়ে যান মিন্টো। সেখান থেকে চৌধুরী কামরুল হোসেন নামে কোনো এক ব্যক্তি মিন্টোকে পৌঁছে দেন ঢাকার ঠাঁটারিবাজারের এক আশ্রমে। ১৯৭৮ সালে ওলে ও বেনফি নামে ডেনিস দম্পতি দত্তক নিয়ে ডেনমার্ক নিয়ে যান মিন্টোকে।
সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে সস্ত্রীক পাবনায় এসেছেন মিন্টো। কিছুদিন আগে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন পাবনায় স্বাধীন বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। ছেলেবেলার কোনো স্মৃতিই মনে নেই তার, জানেন না বাংলা ভাষা। আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে চলে আসেন বাংলাদেশে। পাবনায় এসে উঠেছেন শহরের একটি হোটেলে। মিন্টো বলেন, পুরোনো কাগজ ঘেটে জেনেছেন মাত্র ৬ বছর বয়সে পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ি ঘাট এলাকা থেকে হারিয়ে যান তিনি। সেখান থেকে ঢাকার ঠাঁটারিবাজার টেরি ডেস হোমস নামে শিশু সদনে ছিলেন। পরে শিশু সদন থেকে ১৯৭৮ সালে ডেনমার্কের এক নিঃসন্তান দম্পতি মিন্টোকে দত্তক নিয়ে যান। সেখানেই তার শৈশব-কৈশর কাটে, বিত্ত বৈভবের মধ্যে লেখাপড়া শিখে বড় হন। পেশায় একজন চিত্রশিল্পী। ডেনমার্ক নাগরিক এনিটি হোলমিহেভ নামে এক চিকিৎসককে বিয়ে করে সংসার জীবন শুরু করেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে।
জীবনের শুরুতে তেমন সমস্যার সৃষ্টি না হলেও বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই সব সময় হীনমন্যতায় ভুগতেন তিনি। অবশেষে পরিবারের সবার সিদ্ধান্তে ডেনিস স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ছোটবেলার একটি ছবিকে অবলম্বন করেই ছুটে আসেন পাবনায়। গত দশদিন ধরে পাবনা শহরসহ নগরবাড়ি এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন বাবা-মা কিংবা স্বজনদের খোঁজে।
এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, যদিও ডেনমার্কে আমার পালক বাবা-মা ও স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে খুব সুখেই আছি। এরপরও আমার অন্তর এখনো বার বার কেঁদে ওঠে বাংলাদেশের বাবা-মা ও স্বজনদের জন্য। মনে হয় তাদের পেলেই জীবনটা সম্পূর্ণ হয়ে উঠবে। মিন্টোর স্ত্রী এনিটি হোলমিহেভ বলেন, মিন্টোর এ দেশে কাটানো শৈশবের কোনো স্মৃতিই মনে নেই। যে আশ্রমে তিনি ছিলেন তারও অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি আমরা । জানি এটা খুব কঠিন, তারপরও মিন্টো যদি তার স্বজনদের খুঁজে পায়, তবে দারুন কিছু হবে।
এ বিষয়ে পাবনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি, পুলিশের পক্ষ থেকে যতোটুকু সহযোগিতা করার আমরা করছি। ইতোমধ্যেই তিনি পাবনা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আমাদের পাশাপাশি দেশের গণমাধ্যমগুলোরও মিন্টুর পাশে দাঁড়ানো দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০২১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮
ইএআর/আরবি/