বুধবার (০৩ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের উদ্বেগ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি স্পষ্ট বলবো যে সাংবাদিকরা মনে করেন যে তারা কোনো অন্যায় কাজ বা তারা কারো বিরুদ্ধে অপবাদ বা মিথ্যা তথ্য দেবে না। মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করবে না তাদের উদ্বেগ হওয়ার মতো কিছু নাই। ’
তিনি বলেন, ‘এখানে উদ্বিগ্ন তারা বেশি হবে। যারা এতদিন ধরে খুব তৈরি হয়ে আছে যে এ নির্বাচনের সিডিউল বা নির্বাচন আসার কাছাকাছি- মানে আমাদের ভালো করে ঘায়েল করার জন্য ডক্যুমেন্ট তৈরি করে বসে আছে। ’
‘ছাপছে অলরেডি কোনো কোনো পত্রিকা, আমি দেখি, হেডলাইনও পাই। এতটুকু কি দোষ আছে সেটা খুঁজে বেড়াচ্ছে তারা উদ্বিগ্ন হতে পারে। কারণ তারা ভাবছে এ রকম একটা মিথ্যা নিউজ করবো- তাহলে (আইনে কারণে) এটাতো মাঠে মারা যাবে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘হঠাৎ এতো উদ্বেগ হয়ে গেল কিসের জন্য। আমার কাছে সেটা প্রশ্ন। কারো যদি অপরাধী মন না থাকে বা ভবিষ্যতে কিছু অপরাধ করবে এ রকম পরিকল্পনা যদি না থাকে তার উদ্বেগ হওয়ার কোন কারণ নেই। ’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার, পূর্বানুমতি ছাড়া ডিজিটাল ডিভাইস জব্দের ক্ষমতা বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ দমনে আমাদের কিছু কিছু ডিভাইস ব্যবহার করতে হয়েছে তাদের ট্র্যাক করার জন্য। তাদের যখন ট্র্যাক করলাম যে একটা জঙ্গি এখানে বোমা ফাটাবে বা কিছু একটা করছে। ট্র্যাক করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা যদি তাকে গ্রেফতার না করি, বসে থাকা হয়, এখন ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে হবে, তারপর মামলা দিতে হবে। ও (অপরাধী) কি ওখানে বসে থাকবে? আমাকে তো সঙ্গে সঙ্গে এড্রেস করতে হবে, ধরতে হবে। ধরার পর তারপরই না মামলা হবে। সারা বিশ্বে এটাই করে। ’
সংবাদ সত্য প্রমাণে ব্যর্থ হলে সবাইকে শাস্তি
সংবাদ সত্য প্রমাণ করতে হবে এবং তা করতে ব্যর্থ হলে শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আইনে রাখার প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘ওখানে (আইনে) একটা জিনিসের ল্যাপস আছে। একটা জিনিস সেখানে ঢুকানো দরকার আমি মনে করি- সেটা হলো যদি কেউ কারো বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা তথ্য দেয়। তবে সেই মিথ্যা তথ্যটা তাকে প্রমাণ করতে হবে যে এটা সত্য। ’
‘যদি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় তবে যে সাংবাদিক লিখবে, যে পত্রিকা বা মিডিয়া... প্রকাশ করবে তাদের সবাইকে শাস্তি পেতে হবে। যার বিরুদ্ধে লিখবে তার যে ক্ষতি হবে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তাকে ফাইন করা হবে। যেটা ইংল্যাণ্ডে আইনে আছে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ জায়গাটা একটু কমতি আছে যেটা ইংল্যান্ডের আইনে আছে। আমরা এ আইন করার আগে বিভিন্ন দেশের আইন দেখেছি। ’
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এ রকম উদাহরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়ই একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা নিউজ করেছিলো বিবিসি। যখন এটা মিথ্যা প্রমাণ হয়ে গেলো সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু বিবিসির সংশ্লিষ্ট টপ টু বটম সবাইকে পদত্যাগ করতে হয়েছিলো। ’
সাংবাদিকরা উদ্বিগ্ন, আমাদের উদ্বেগটা দেখবে কে?
বিভিন্ন সময় মিথ্যা সংবাদের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমি যদি এখন বলি ২০০৭ সালে আমার বিরুদ্ধে যত দুর্নীতি, যেসব পত্রিকায় নিউজ হয়েছিল বা এখনো আমাদের অনেকের বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা নিউজ দিয়ে দিল- তদন্ত করে প্রমাণ হলো এটা মিথ্যা। ’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘কিন্তু তারপর কি হয় যার বিরুদ্ধে নিউজ করে তারতো জীবনটা শেষ, তার তো ড্যামেজ (ক্ষতি) হয়ে গেলো। কিন্তু যে পত্রিকা এটা করলো সে কি শাস্তি পেলো তার তো কোনো সাজা হলো না। ’
‘তারা তো বহাল তবিয়তে তত্ত্ব কথা বলে মুখ উঁচু করে আছে সমাজে। তাদের তো এই লজ্জা হয় না যে একটা মিথ্যা তথ্য দিয়েছে সেটা মিথ্যা প্রমাণ হলো। কিন্তু যাকে ড্যামেজটা করা হলো তার... যে ক্ষতি হলো সেই ক্ষতিপূরণ হবে কিভাবে?’
নিজের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ পদ্মাসেতু নিয়ে, মিগ নিয়ে, ফ্রিগেট নিয়ে। যা করেছি সব নিয়েই তো মামলা হয়েছে। (অভিযোগ) একটাওতো প্রমাণ করতে পারেনি। কিন্তু যারা উৎসাহিত হয়ে বড় বড় হেডলাইনে লিখেছে তারা তো বেশ, এখনো সমাজে বেশ উচ্চস্বরে কথা বলে যাচ্ছে। ’
‘কিন্তু আমাদের যে ক্ষতি, যে মানসিক যন্ত্রণাটা বা যার বিরুদ্ধে লিখেছে তার যে মানসিক যন্ত্রণাটা- তার ছেলে মেয়ে তাদের ওপর। তার যে অসম্মান হলো তার ক্ষতিপূরণটা কে দিবে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাংবাদিকরা খুব উদ্বিগ্ন আমি বুঝলাম- কিন্তু আমাদের উদ্বেগটা কে দেখবো বা যারাই এরকম ভিকটিম তাদের উদ্বেগটা কে দেখবে?’
যারা এ ধরনের কাজ করে তারা বিকৃতমনা
ক্রিকেটার লিটন দাসের ফেসবুক পেজে পূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে একটি পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে মৌলবাদী গোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক মন্তব্য-গালাগালের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা এ ধরনের কাজ করে তারা বিকৃতমনা।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এগুলোর মোকাবেলা করার জন্যই তো আমরা সাইবার সিকিউরিটি আইন পাস করেছি। এ সমস্ত নোংরামি যাতে না হয় সেটা মাথায় রেখে সাইবার সিকিউরিটি আইনটি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সাইবার সিকিউরিটি প্রতিটি দেশেই একটি বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। অনেক জায়গায় সামাজিক, পারিবারিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। নানা ধরনের ক্রাইম, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং পর্ন- নানা ধরনের ঘটনা দেখা দিচ্ছে।
সমাজ এবং গণমাধ্যমকে এ ধরনের অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৮
এমইউএম/এসকে/এসএইচ