প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (৮ অক্টোবর) তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন-২০১৮’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্যপদ হ্রাস করা হয়েছে।
**৫ গ্রামের বেশি ইয়াবা বিপণন-সেবনের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
তিনি বলেন, এতদিন ৩০ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থন না পেলে ট্রেড ইউনিয়ন করা যেত না। সংশোধিত আইন অনুযায়ী এখন ২০ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থন মিললে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে।
ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধনের আবেদন পাওয়ার ৫৫ দিনের মধ্যে সরকারকে নিবন্ধন দিতে হবে। আবেদন প্রত্যাখ্যান হলে ৩০ দিনের মধ্যে শ্রম আদালতে আপিল করা যাবে।
শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা এবং উৎপানশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে ২০০৬ সালের শ্রম আইন করে সরকার। ২০১৩ সালে আইনটির বড় পরিমাণে সংশোধন করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) চাহিদা অনুযায়ী শ্রমবান্ধব নীতি সব জায়গায় কার্যকর করতে শ্রম আইন সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, কারখানার শ্রমিকদের উৎসব ভাতা দেওয়া হবে।
নারী শ্রমিক প্রসূতি কল্যাণ সুবিধাসহ প্রসবের পরে আট সপ্তাহ পর্যন্ত অনুপস্থিত থাকতে পারবেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
কোনো কারখানায় ২৫ জনের বেশি শ্রমিক থাকলে তাদের জন্য পানির ব্যবস্থাসহ খাবার কক্ষ রাখতে হবে, সেখানে বিশ্রামেরও ব্যবস্থা থাকতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শ্রমিকরা ইচ্ছা করলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কাজ করে পরে তা উৎসব ছুটির সঙ্গে ভোগ করতে পারবেন। উৎসবের ছুটিতে কাজ করালে এ দিনের বিকল্প ছুটিসহ দুইদিনের ক্ষতিপূরণ মজুরি দিতে হবে।
‘অপ্রাপ্ত বয়স্ক’ শব্দটি শ্রম আইন থেকে বাদ দিয়ে সেখানে ‘কিশোর’ শব্দটি যোগ করা হয়েছে। আগে ১২ বছর বয়সী শিশুরা কারখানায় হালকা কাজের সুযোগ পেত। সংশোধিত আইন অনুযায়ী ১৪-১৮ বছর বয়সী কিশোররা হালকা কাজ করতে পারবে।
সংশোধিক শ্রম আইন পাস হলে খাবার ও বিশ্রামের সময় বাদে টানা ১০ ঘণ্টার বেশি কোনো শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো যাবে না। কারখানা ও শিল্প শ্রমিকরা সপ্তাহে একদিন এবং দোকান ও প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা দেড়দিন ছুটি পাবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহনে নিয়োজিত পাইলট, প্রকৌশলী ও কেবিন ক্রুরা স্বীকৃতি স্ব স্ব আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্ধীকরণের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে পারবেন। যারা সিবিএ’র সদস্য না তারা রশিদের মাধ্যমে চাঁদা পরিশোধ করতে পারবেন।
বলপ্রয়োগ, হুমকি প্রদর্শন, কোনো স্থানে আটক রাখা, শারীরিক আঘাত এবং পানি, বিদ্যুৎ বা গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বা অন্য কোনো পন্থায় মালিককে কোনো কিছু মেনে নিতে বাধ্য করলে তা অসদাচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
শ্রমকিরা বেআইনি ধর্মঘটে গেলে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। ধর্মঘট করতে আগে দুই-তৃতীয়াংশ শ্রমিকের সমর্থনের প্রয়োজন হতো। সংশোধিত আইনে ৫১ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থন থাকার কথা বলা হয়েছে।
সংশোধিত আইন পাস হলে শ্রম আদালতগুলোকে মামলা দায়েরের তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে রায় দিতে হবে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে আবশ্যিকভাবে রায় দিতে হবে। এতোদিন রায় দেওয়ার জন্য ৬০ দিন নির্ধারিত ছিল। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে কেউ আপিল করলে তা ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে আবশ্যিকভাবে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে তা শেষ করতে হবে।
কোনো মালিক মহিলা শ্রমিককে প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করলে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো মালিক বা শ্রমিক অসৎ শ্রম আচরণ করলে এক বছর কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আগে দুই বছর সাজার সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল।
বেআইনি ধর্মঘট করলে আগে এক বছর কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হতো। সংশোধিত আইনে সাজা কমিয়ে ছয় মাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। জরিমানা আগের পাঁচ হাজার টাকা রাখা হয়েছে।
কোনো ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হলে এক মাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে। আগে এই অপরাধে ছয় মাস কারাদণ্ড দেওয়া হতো।
আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী সংশোধিত আইনে মালিক, শ্রমিক ও সরকার মিলে একটি ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ গঠন করতে পারবে।
সংশোধিত আইন অনুযায়ী, শ্রমিকরা কর্মরত অবস্থায় মারা গেলে এক লাখ টাকার বদলে দুই লাখ টাকা এবং স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে সোয়া এক লাখ টাকার পরিবর্তে আড়াই লাখ টাকা পাবেন। কোনো ব্যক্তি কোনো শিশু বা কিশোরকে চাকরিতে নিযুক্ত করলে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
নতুন আইনে প্রধান পরিদর্শকের পদকে হালনাগাদ করে মহাপরিদর্শক এবং উপ-প্রধান পরিদর্শকের পদকে অতিরিক্ত প্রধান পরিদর্শক করা হয়েছে। এছাড়া যুগ্ম-মহাপরিদর্শক, উপ-মহাপরিদর্শক এবং সহকারী মহাপরিদর্শক ছাড়াও বেশি কিছু নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
শ্রমিক সংগঠনগুলো বিদেশ থেকে চাঁদা গ্রহণ করলে সরকারকে জানাতে হবে। কোনো প্রতিবন্ধী শ্রমিককে বিপদজনক যন্ত্রপাতির কাজে অথবা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ করা যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৮
এমআইএইচ/আরআর