সোমবার (০৮ অক্টোবর) বিকেলে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের (শেবামেক) সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।
‘দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন কিন্তু স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের দ্বারে পৌঁছানোর আগেই তাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হলো, হত্যা করা হলো। আমাদের একটাই লক্ষ্য, এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা এবং জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আর সেই সোনার বাংলাদেশই আমরা গড়ে তুলতে চাই। ’
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সরকার গঠনের পর যে সমস্ত এলাকা অনুন্নত ছিলো সেগুলোর সার্বিক উন্নয়নের জন্য ব্যাপকভাবে কাজ শুরু করি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখি।
‘আমরা প্রথমবারেই এই বরিশালের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য শিকারপুর-দোয়ারিকা-গাবখাল ব্রিজ, কীর্তনখোলা নদীর ওপর ব্রিজ, লেবুখালী ব্রিজের পরিকল্পনা নিয়েছিলাম এবং অনেকগুলো বাস্তবায়নও করে দিই। পদ্মাসেতু স্থাপনের জন্য ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করে দিই। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তা বন্ধ করে দেয়। ’
তিনি বলেন, পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করছি এবং তার সাথে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। বরিশাল অঞ্চলে এখনো রেল যায়নি আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি, যে আমরা রেল যোগাযোগটা পদ্মাসেতু থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবো। দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য পায়রা, বিষখালী, আগুনমুখা নদীসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্রিজ করে রাস্তা করে দিচ্ছি।
স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমারা কমিউনিটি ক্লিনিক করে স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাচ্ছি। আমরা ডাক্তার-নার্স সবই নিয়োগ দিচ্ছি। তারপরও দুঃখজনক যে, আমাদের উপজেলায় ডাক্তার থাকে না। আমরা হাসপাতালগুলোকে ৩১ বেড থেকে ৫০ বেড করে দিচ্ছি, ১০০ বেডের হাসপাতালগুলো আড়াইশ বেড করে দিচ্ছি।
‘পাশাপাশি অনেক এলাকার জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এমন এমন জায়গা রয়েছে, হয়তো দেখা যাচ্ছে অপারেশন থিয়েটার পরে আছে কিন্তু অপারেশন করার মতো ডাক্তার-নার্স নেই। আমরা শুধু প্রতিষ্ঠান করে যাবো আর সেগুলো অবহেলিত থাকবে এটা কিন্তু হতে পারে না। ’
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের মানুষের চাহিদা মতো মেডিকেল কলেজ করে দিচ্ছি, সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন ইনস্টিটিউট করে দিচ্ছি। কাজেই মানুষের সেবা দেওয়া প্রত্যেকর দায়িত্ব। আমি আশাকরি সেবাটা মানুষ পাবে।
মেডিকেল শিক্ষায় নানা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের একটি পরিকল্পনা আছে- প্রত্যেকটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করবো। ইতিমধ্যে আমরা চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করেছি, এ অঞ্চলেও করবো।
‘তবে একটা কথা আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই- কোনো মেডিকেল কলেজকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করবো না। বিশ্ববিদ্যালয় হবে সম্পূর্ণ আলাদা, আর তা হবে গবেষণামূলক এবং পোস্টগ্র্যাজুয়েশন থাকবে। পাশাপাশি নার্সিং ট্রেনিং ও শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। আমরা চাই দেশটা এগিয়ে যাক, দেশের মানুষ সেবা পাক। ’
তিনি বলেন, আমরা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছি রূপপুরে। বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েকটি দ্বীপাঞ্চল ইতিমধ্যে আমরা সার্ভে করেছি। পরবর্তীতে এখানে আমরা প্রায় ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবো।
‘এছাড়া বরিশালসহ সমগ্র বাংলাদেশে আমরা একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলিছ। বরিশালে গ্যাসের সমস্যা, ভোলায় গ্যাস পাওয়া গেছে। পাইপ লাইনের মাধ্যমে ভোলার গ্যাস যাতে বরিশালে আসে সেজন্য আমরা ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি আমরা করে দিয়েছি। কারণ এই অঞ্চলে কিছু শিল্পাঞ্চল হওয়া একান্ত প্রয়োজন। ’
‘লবণসহিষ্ণু ধান, বীজ আমরা আবিষ্কার করেছি এবং উৎপাদন শুরু করেছি। জলমগ্ন ধান উৎপাদনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। ভাসমান ধাপের ওপর সবজি চাষ গোটা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছি। বরিশালের গৌরব শস্য ভাণ্ডারে রূপান্তর করার জন্য আমরা গবেষণা করছি। বেসরকারি খাতকে আমরা উম্মুক্ত করে দিয়েছি। কারণ বেসরকারি খাত যতো উম্মুক্ত হবে ততো কর্মসংস্থান বাড়বে। ’
অনুষ্ঠানে শেবামেক ক্যাম্পাসের অনুষ্ঠাস্থলে বিশেষ অতিথি ছিলেন- স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) তালুকদার মো. ইউনুস, বরিশাল-৫ আসনের এমপি জেবুন্নেসা আফরোজ, বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৮
এমএস/এমএ