এরইমধ্যে রঙ তুলির শেষ আঁচড়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় সাজছেন দুর্গা। শিল্পীর এখন কেবল শাড়ি, গহনা জড়ানো কাজ চলছে দেবীর প্রতীমায়।
দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে ছয়দিনের এই শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হবে আগামী রোববার (১৪ অক্টোবর)। পরদিন ১৫ অক্টোবর হবে আমন্ত্রণ ও অধিবাস, ১৬ অক্টোবর সপ্তমী বিহিত, ১৭ অক্টোবর দেবীর মহাঅষ্টমী বিহিত ও কুমারী পূজার সঙ্গে সন্ধিপূজা, ১৮ অক্টোবর নবমী বিহিত এবং ১৯ অক্টোবর মহাদশমীতে বিহিতপূজা। সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন শেষে সন্ধ্যা আরত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই ধর্মীয় উৎসব। এরই মধ্যে দিন গণনাও শুরু হয়েছে দুর্গোৎসবের।
গোপাল টিলা সার্বজনীন পূজা মণ্ডপের প্র্রধান পুরোহিত কাব্যতীর্থ রজত কান্তি চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, ষষ্টির দিনে দেবিকে বিল্লতলায় (বেল তলায়) বেল পাতাদিয়ে মর্তলোকে আহ্বান জানাবেন পুরোহিতরা। সনাতন ধর্মমতে, এই পাঁচদিনের জন্যে এবার মর্তেলোকে ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে আসবেন দেবী। দশমীতে জলবিষর্জনায় শিবের সঙ্গে স্বামীর গৃহে ফিরে যাবেন পালকীতে সওয়ার হয়ে।
তিনি বলেন, দেবী অনেক রূপে আসেন। বৈষ্ণবী রূপে আসা শান্তির প্রতীক। আসুরিক শক্তিতে আসেন অসুর বদ করতে। ঘোটকে চড়ে আসা মানে ছত্রভঙ্গ তথা হানাহানি-মারামরির ইঙ্গিত বহন করে। পালকীতে সওয়ার হওয়া তথা গুপ্ত অপরাধের অশনি সংকেত। তাই বিষর্জনের পর প্রত্যেক মণ্ডপে শান্তির জন্য আরাধনা করবেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট জেলা ও মহানগর এলাকায় এবার ৫৯৮ মণ্ডপে পূজা উদযাপন হবে। এরমধ্যে মেট্রো এলাকায় ১৩৩টির মধ্যে নগর এলাকায় ৬৩ মণ্ডপের মধ্যে ৪৮টি সার্বজনীন এবং ব্যক্তিগত ১৫টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হবে।
এদিকে দুর্গোৎসব ঘিরে সিলেটজুড়ে থাকবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কর্তব্য পালন করবেন।
র্যাব-পুলিশের সদস্যরা স্ট্যান্ডবাই ডিউটি ছাড়াও থাকবে টহল ও সিয়েরা পার্টি। বখাটেদের উৎপাত ঠেকাতে পুলিশের নারী সদস্যরাও সাধারণ পোশাকে বিচরণ করবেন সর্বত্র। দুর্গা পূজাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাতে কোনো গুজব না ছড়ায়, তা তদারকি করবেন পুলিশের চৌকস কর্মকর্তারা।
এরইমধ্যে পূজা উদযাপনে ২৫ নির্দেশনা জারি করেছে এসএমপি। এসবের মধ্যে চুরি ছিনতাইসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডরোধে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক রাখা, মণ্ডপগুলোতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থার পাশাপাশি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর ও হ্যাজাক লাইটের ব্যবস্থা রাখা। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখার জন্য বলা হয়েছে।
তারপরও কোনো ধরনের অতৎপরতা লক্ষ্য করা গেলে তাৎক্ষণিক জাতীয় হেল্প ডেস্ক নাম্বার ‘৯৯৯’ এ জানানোর অনুরোধ জানিয়েছেন নগর পুলিশের দায়িত্বশীলরা।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ বলেন, দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে সাদা পোশাকে দেড় পুলিশের সহস্রাধিক জনবল মাঠে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। মণ্ডপের গুরুত্ব বিবেচনা করে পুলিশের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হবে। কোনোও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে। সেদিকে বিবেচনায় এনে ছক চূড়ান্ত করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি আনসার-ভিডিপি সদস্যরাও মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।
র্যাব-৯ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মাঈন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দুর্গোৎসবে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব সদস্যরা সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। এরইমধ্যে র্যাব’র গোয়েন্দা সদস্যরাও মাঠে কর্মরত রয়েছে। তবে কি পারিমাণ সদস্য মোতায়েন রাখা হবে, এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ ব্যাপারে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, দুর্গোৎসবকে নির্বিগ্ন করতে প্রশাসনের প্রশাসনের পাশাপাশি প্রতিটি মণ্ডপে ৩০/৪০ জন ব্যাজধারী স্বেচ্ছাসেবী থাকবেন। পাশাপাশি সামর্থ অনুযায়ী মণ্ডপগুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৮
এনইউ/এএটি