ঢাকা, সোমবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০ মহররম ১৪৪৬

জাতীয়

পার্বতীপুরে বাংলাদেশের পতাকা উড়ে ১৫ ডিসেম্বর

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৮
পার্বতীপুরে বাংলাদেশের পতাকা উড়ে ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলক

পার্বতীপুর (দিনাজপুর): দিনাজপুর জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা এবং দেশের অন্যতম বৃহত্তম চার লাইনের রেল জংশন খ্যাত পার্বতীপুর শহর হানাদারমুক্ত হয় ১৫ ডিসেম্বর। 

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণের পাশাপাশি ১৪ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী বিমান হামলা শুরু করলে পাকিস্তানি সেনা এবং তাদের দোসররা শেষ রাতের মধ্যেই সৈয়দপুরে পালিয়ে যায়। ১৫ ডিসেম্বর সকালে উড়ানো হয় বাংলাদেশের পতাকা।

মুক্তিযুদ্ধে সারাদেশে যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছিল সেসব অভিন্ন হলেও পার্বতীপুরের ঘটনা ছিল ব্যতিক্রমী। পার্বতীপুর শহরে ছিল প্রায় ১ লাখ অবাঙালি। এসব অবাঙালিরা ১৯৪৭ সালের পর ভারতের বিহারসহ বিভিন্ন প্রদেশ থেকে এখানে চলে আসে। পরে তারা হয়ে যায় শাসক পাকিস্তানিদের কাছের মানুষ। আর পার্বতীপুরের বাঙালিরা হয়ে পড়ে নিজ শহরে অবহেলিত, নির্যাতিত।

নির্যাতিত ও বিক্ষুদ্ধ এসব মানুষ দেশব্যাপী যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংঘবদ্ধ হতে শুরু করে। তৎকালীন বেঙ্গল রেজিমেন্ট, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর আড়াইশ’ সদস্য খোলাহাটির নুরুল হুদা স্কুলে এসে তাবু ফেলে। ১ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে বাঙালি সশস্ত্র সৈন্য ও স্থানীয় ছাত্র-শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী, যুবসমাজ লাঠি, দা, বল্লম নিয়ে শহরের চার পাশে অবস্থান নেয়। বৃত্তিপাড়ায় বসানো হয় রকেট লাঞ্চার।

২ এপ্রিল ভোরে বাঙালি সৈন্যরা শহরে রকেট লাঞ্চার নিক্ষেপ করলে অবাঙালিদের সঙ্গে তুমুল গোলাগুলি হয়। এ ঘটনার পর হানাদার বাহিনী ও তাদের সহচর অবাঙালিরা হিংস্র উন্মত্ততায় মেতে ওঠে।

পাকিস্তানি সেনা, মিলিশিয়া, অবাঙালি বাচ্চু খান, কামরুজ্জামান, জাকির খান ও স্থানীয় রাজাকাররা গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে শহরের চতুর্দিকে ১০ মাইল এলাকা জুড়ে ধ্বংস স্তুপে পরিণত করে। শত শত নারী-পুরুষকে ধরে এনে ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যা করা হয়।  

হাবড়া ইউনিয়নের রামরায়পুর ফকিরপাড়ার আমজাদ হোসেন শাহকে এপ্রিলের শেষের দিকে ধরে নিয়ে গিয়ে নবাবগঞ্জে হত্যা করে হানাদার বাহিনী। হাবড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম সরদার, ক্যাপ্টেন ডাক্তারের ছেলে সামসাদসহ অনেককে রেলইঞ্জিনের বয়লারে পৈশাচিকভাবে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়।  
পার্বতীপুর রেল জংশন হওয়ায় বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত লোকজনকে ধরে ট্রেনে করে নিয়ে এসে হত্যা করে ১ নম্বর লেভেল ক্রসিং এর পাশে পার্বতীপুর-দিনাজপুর রেল লাইন সংলগ্ন স্থানে গণকবর দেওয়া হয়।

আগস্টের শেষের দিকে এ অঞ্চলে গেরিলা হামলা তীব্ররূপ নেয়। আনন্দবাজার, পাটিকাঘাট এলাকায় গেরিলা ক্যাম্প স্থাপিত হয়। হাবড়া আমবাগান, সাঁকোয়ার ব্রিজ ও মনমথপুর রেল স্টেশনে বড় বড় যুদ্ধ সংঘঠিত হয়।

মুক্তিযোদ্ধারা ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে চৌহাটি, ঘুঘুমারি, আমডুংগির হাট, ভবানীপুর, হাবড়া, খোলাহাটি, বেলাইচন্ডি, হরিপুর, তাজনগর এলাকার পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার ক্যাম্পগুলো গুড়িয়ে দেয়। এরপর অবাঙালিরা পার্বতীপুর ছেড়ে যেতে শুরু করে।

১৪ ডিসেম্বর প্রথম ভারতীয় বিমান বাহিনী পার্বতীপুরে বিমান হামলা শুরু করে। মিত্রবাহিনীর বিমান হামলা ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা শেষ রাতের মধ্যেই সৈয়দপুরে পালিয়ে যায়। পাকিস্তানি সেনাদের শেষ সামরিক গাড়িটি পালাবার পথে পার্বতীপুর-সৈয়দপুর সড়কের বান্নিঘাটে পেতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে উড়ে গেলে একজন কর্নেল, মেজর ও লেফটেন্যান্ট নিহত হয়।

১৫ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধা ও বীর জনতা পার্বতীপুর শহরে প্রবেশ করে শোয়েব ভবনসহ বড় বড় ভবনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে বিজয়োল্লাস শুরু করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।