ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ময়মনসিংহে শোকস্তব্ধ সৈয়দ আশরাফের বাড়ি

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৯
ময়মনসিংহে শোকস্তব্ধ সৈয়দ আশরাফের বাড়ি সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্মৃতিজাগানিয়া সেই বাড়ি | ছবি: অনিক খান

ময়মনসিংহ: সাদামাটা দোতলা বাড়িটির প্রতিটি কোণায় তার স্মৃতিচিহ্ন। তার দুরন্ত শৈশব-কৈশর এ বাড়িতেই কেটেছে। বছরখানেক আগেই বাড়িটিতে শেষবারের মতো এসেছিলেন তিনি। তখনো হয়তো জানতেন না শৈশবের নাড়িপোতা এই ভিটাতে আর কখনো ফেরা হবে না তার!

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদ্যপ্রয়াত সদস্য, দুইবারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্মৃতিজাগানিয়া ময়মনসিংহ নগরীর কলেজ রোডের বাড়িটি এখন শোকস্তব্ধ। বাড়িটিতে সুনসান নীরব পরিবেশ।

 

বাড়িটির ইট-কাঠ-আসবাবও যেন ডুকরে কাঁদছে, হাহাকার করছে সৈয়দ আশরাফের ইসলামের জন্য! বাড়িটির ড্রইং রুমে পুরনো ফ্রেমে বাঁধানো তার ছবি। এর আগের দেয়ালে সাঁটানো একাদশ সংসদ নির্বাচনের পোস্টার। কোনো কক্ষেই ছাপ নেই প্রাচুর্য বা শানসওকতের।

শনিবার (০৫ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে শোকাচ্ছন্ন, বিমুঢ় বাড়িটিতে গিয়ে দেখা গেলো এমন চিত্র।  

বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ভাগ্নে সৈয়দ রজব আলী এখন বাড়িটি দেখভাল করেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ শনিবার সন্ধ্যায় ব্যাংকক থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছানোয় সেখানে চলে গেছেন তিনি।

রোববার তৃতীয় নামাজে জানাজার জন্য দুপুরে নিয়ে আসা হবে সৈয়দ আশরাফকে। দুপুর ২টায় ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে তার নামাজে জানাজা। পরে সেখান থেকে মরদেহ ঢাকায় নিয়ে গিয়ে বাদ আসর বনানী কবরস্থানে দাফন হবে।

জানা গেছে, ১৯৬৪ সালের দিকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বাবা দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম নগরীর কলেজ রোড এলাকায় একটু জমি কিনে টিনশেড নির্মাণ করে নিয়মিত বসবাস শুরু করেন। পরবর্তীতে তিন রুমের টিনশেডের বাড়িটি পাকা করা হয়।  
সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বাড়ির ড্রইং রুম | ছবি: অনিক খানএখন এটি দোতলা একটি বাড়ি। মূলত এ বাড়িকে ময়মনসিংহবাসীর সংগ্রামী রাজনৈতিক ঐতিহ্য এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।  

চারিদিকে স্তব্ধ শূন্যতায় ঘেরা বাড়িটিতে কলিংবেল চাপার পর বেরিয়ে এলেন রজব আলীর ছোট্ট ছেলে সিয়াম ও শ্যালক মিজানুর রহমান। তারা দু’জনেই ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বেডরুম থেকে বাড়ির প্রতিটি কক্ষ।  

বেডরুম, ড্রইংরুম, আসবাব প্রমাণ দিচ্ছিলো কত সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন সাবেক এই জনপ্রশাসনমন্ত্রী।

স্তব্ধ নির্বাক হয়ে সিয়াম বলছিলেন, ‘চাচার মধ্যে কোনো অহংকার ছিলো না। শৈশবে চাচার কোলে কত উঠেছি। বড় হয়ে চাচার সঙ্গে ঘুরতেও গেছি। চাচার অনেক আদর পেয়েছি। আর কোনদিনই চাচা আদর করবেন না। নাম ধরে ডাকবেন না!’

কর্মব্যস্ত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জীবনের শেষ দিকে আসা-যাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলেন ময়মনসিংহে। তবে বছরে অন্তত একবার কি দুবার হলেও এই বাড়িতে আসতেন। দু’একদিন থেকে আবার ফিরে যেতেন ইট-পাথরের যান্ত্রিক নগরীতে।

সেইসব স্মৃতি হাতড়ে নগরীর নাসিরাবাদ কলেজ পড়ুয়া মিজানুর রহমান বলছিলেন, ‘এত বড় একজন রাজনীতিক, মন্ত্রী হয়েও সাধারণ ছিলেন তিনি (সৈয়দ আশরাফ)। কোনো ভোগ বিলাস কিচ্ছু ছিলো না তার। সাত সকালে নাশতা করতেন মুরগির ডিম আর ম্যারা পিঠায়। আর পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ছিলো। যখন এখানে থাকতেন নিয়মিতই ৮ থেকে ১০টি পত্রিকা পড়তেন। এর সঙ্গে কিছুক্ষণ পর পর লাল চা খেতেন। ’

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, ‘খাবার টেবিলে তাকিয়ে দেখতো না কি আছে? যেটা পেতেন সেটাই খেতেন। আর কখনোই তার সেবা-শুশ্রুষা করার সুযোগ হবে না আমাদের!’

** সৈয়দ আশরাফকে শেষ বিদায়ের অপেক্ষায় ময়মনসিংহ

বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৮ 
এমএএএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।