ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বন্দি স্থানান্তর:অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ইতিহাসের সাক্ষী তারা

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৯
বন্দি স্থানান্তর:অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ইতিহাসের সাক্ষী তারা শেকলের ফাঁক গলিয়ে উঁকি দিচ্ছে বিবর্ণ দু’চোখ

সিলেট: প্রিজন ভ্যানের শিকে ধরা বৃদ্ধের একজোড়া হাত। শেকলের ফাঁক গলিয়ে উঁকি দিচ্ছে বিবর্ণ দু’চোখ। যেনো নয়নজুড়ে চেনা মুখের সন্ধান। বন্দি স্থানান্তরের সময় প্রিজন ভ্যানের এমন দৃশ্যই ভাবিয়েছে পথের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনকেও।

পুরনো কারাগারকে বিদায় জানিয়ে নতুন কারাগারে যাচ্ছেন বন্দিরা। ২২৯ বছরের পুরনো কারাগার ছেড়ে যাওয়া যেমন তাদের জন্য ইতিহাস, তেমনি নতুন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টের সারথী হয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হলেন বন্দিরা।

বন্দি স্থানান্তরের এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কোলাহল মুখর হচ্ছে সিলেট শহরের উপকণ্ঠে নির্মিত নতুন কারাগার।

শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে প্রিজন ভ্যানে করে কঠোর নিরাপত্তায় শুরু হয় বন্দি স্থানান্তর কার্যক্রম। চলবে শনিবার (১২ জানুয়ারি) পর্যন্ত।

সরেজমিন দেখা গেছে, বন্দি স্থানান্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে শুক্রবার সকাল থেকে নগরীর পুরনো কারাগারের সামনে থেকে শহরতলীর বাধাঘাটে নবনির্মিত কারাগার পর্যন্ত রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ৭/৮টি প্রিজন ভ্যানে করে বন্দিদের পুলিশি পাহারায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। বন্দিদের নিয়ে চলাচল করা সড়কে যান চলাচলও সীমিত করা হয়েছে। এ কারণে ১১ ও ১২ জানুয়ারি (শুক্র ও শনিবার) কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ রাখার নোটিশ জারি করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
 
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলা সুপার মো. আব্দুল জলিল বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত পুরনো কারাগারে বন্দির সংখ্যা ২ হাজার ৩শ’ জন। এরমধ্যে ৮শ’ হাজতি ছাড়া বাকি সব কয়েদি। তবে আজ কত সংখ্যক বন্দি স্থানান্তর করা হবে, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কোনো বক্তব্য দেননি তিনি।

সিলেট নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুছা বাংলানিউজকে বলেন, বন্দি স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় কারা কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুসারে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ফলে কঠোর নিরাপত্তায় বন্দিদের নতুন কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
  
কারা সূত্র জানায়, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে ১৭৮৯ সালে সিলেট শহরের অভ্যন্তর ধোপাদিঘীর পাড়ে ২৪ দশমিক ৬৭ একর জমির উপর নির্মাণ করা হয়েছিল জেলা কারাগার। পুরাতন কারাগারের অভ্যন্তরে ১০ একর এবং বাইরে রয়েছে প্রায় ১৫ একর ভূমি। সে হিসেবে প্রতিষ্ঠার ২২৯ বছর পর উদ্বোধনের ৩ মাসের মধ্যেই প্রথমবারের মতো বন্দি স্থানান্তর করা হচ্ছে শহরতলীর বাদাঘাটে নির্মিত নতুন কারাগারে।
 
১৯৯৭ সালে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপান্তরের পর এর ধারণক্ষমতা দাঁড়ায় ১ হাজার ২১০ জনে। বর্তমানে এই কারাগারে বন্দি আছেন ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ।
 
দুই হাজার বন্দির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন নবনির্মিত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারটির গত বছরের ১ নভেম্বর ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে নতুন কারাগার হলেও পুরাতন কারাগারটিও ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৮
এনইউ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।