ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পানের চড়া দামে খুশি চাষি, বিপাকে ভোক্তা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৯
পানের চড়া দামে খুশি চাষি, বিপাকে ভোক্তা পানের বরজ ও চাষি/ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: খুলনাঞ্চলের এমন কোনো ঘর খুঁজে পাওয়া মুশকিল যেখানে কেউ পান খান না। দাদি-নানি, বাবা-মা, মাসি-পিসি, মামা-কাকা কেউ না কেউ পান খানই। আবার কেউ শখ করে হলেও খান পান। পান খাওয়ার অভ্যাস নেই যাদের তারাও কোনো অনুষ্ঠানে ভোজের শেষে এক খিলি পান মুখে পুরতে ভালোবাসেন। কিন্তু এবার পানের দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এসব ভোক্তারা পড়েছেন বিপাকে। 

শহরে খিলি পানের দোকানে এক খিলি পান বিক্রি হচ্ছে ৭-১০ টাকায়। শখের এ খাবারের দাম লাগামছাড়া হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা।



পান ক্রেতা আসাদুল্লাহ বলেন, পান-সুপারির যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। দিন দিন পানের দাম বাড়ায় অনেকে এরই মধ্যে কমিয়ে দিয়েছেন পান খাওয়া।

অপরদিকে এবার পানের ভালো দাম পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। চলতি মৌসুমে যেসব চাষিদের পানের বাম্পার ফলন হয়েছে তারা এখন বেজায় খুশিতে।  

খুলনা ও বাগেরহাটের বেশ কয়েকজন চাষি জানান, চলতি মৌসুমে যাদের ফলন ভালো হয়েছে তারা দামও তেমন পাচ্ছেন। পান চাষ নিয়ে এ বছর চাষিদের মুখে হাসি।

শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) সকালে রূপসা উপজেলার তালতলা গ্রামের পানচাষি ইন্দ্রজীত জানান, এ বছর পানের দাম সবচেয়ে বেশি। বৃষ্টি কম হওয়ায় ফলন তুলনামূলক কম হয়েছে। প্রকারভেদে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা করে এক পোন (৮০টি) পান পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে।  

তিনি জানান, তাদের গ্রামে প্রায় দেড় শতাধিক পানের বরজ (পান ক্ষেত) রয়েছে। রূপসার তালতলা ছাড়াও উপজেলার স্বল্পবাহিরদিয়া, গিলাতলা, মানসা বাজার, মৌভোগ, ঘাটভোগ, পাচানী, আলাইপুর, চানপুর, কামটা ,শ্রীরামপুর, দেবীপুর, শিয়েলী, কিসমত খুলনা, ডোবা, বড়বাহিরদিয়া, খাজাডাঙ্গা, বুড়িরবটতলার প্রায় প্রতি বাড়িতে কম-বেশি বরজ রয়েছে। এসব এলাকার পান মানসা ও উপজেলা বাজারে পাইকারিতে বিক্রি হয়। এসব পান ঢাকা, ফেনী, কুমিল্লা থেকে ব্যাপারীরা এসে কিনে নিয়ে যান।  

একই গ্রামের বিপুল দত্ত বলেন, আমার ১০ কাঠার একটি পানের বরজ রয়েছে। ফলন ভালোই হয়েছে। এবছর তুলনামূলক বৃষ্টি কম হয়েছে। যার কারণে পানের ফলনও তুলনামূলক কম। যাদের ফলন ভালো হয়েছে তারা যেকোনো সময়ের চেয়ে পানের ভালো দাম পাচ্ছেন।  

বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের বাদোখালী গ্রামের পানচাষি ইকবাল বলেন, আমাদের আড়াই বিঘা পানের বরজ রয়েছে। এবার পানের ফলন যেমন ভালো হয়েছে দামও ভালো পাচ্ছি। আমাদের এলাকার মানুষ বরজ ও মাছের ঘেরের উপর নির্ভরশীল। কাঁঠালতলা, যাত্রাপুর ও কাটাখালির নওয়াপাড়ায় এবার পানের ভালো ফলন হয়েছে।  
 
তিনি জানান, পানের দাম সামনে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  

যাদের পানের ফলন ভালো হয়নি তারা জানিয়েছেন, এবছর কম বৃষ্টি হওয়া, শীতকালের কুয়াশা ও পানের ডাটা পচা রোগে তাদের ফলন ভালো হয়নি।
 
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, খুলনায় পানের বাজার এখন বেশ চড়া। হাটবাজার ও পাইকারি মোকামগুলোতে সর্বকালের রেকর্ডমূল্যে বিক্রি হচ্ছে পান।  

মোকামের একাধিক পাইকারি পান ব্যবসায়ী জানান, ভালোমানের পানের প্রতি পোন বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা, যা আগে ছিল ২০০ টাকা, মাঝারি মানের প্রতি পোন পান বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, যা আগে ছিল ১৪০ টাকা ও ছোট আকারের পানের প্রতি পোন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, যা আগে ছিল ৫০ টাকা করে। ভালোমানের পানের প্রতি গাদি (৮০ পোন/বিড়া) বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৭-২৮ হাজার টাকা, যা আগে ছিল ২২-২৩ হাজার টাকা। মাঝারি মানের প্রতি গাদি পান বিক্রি হচ্ছে ২৪ হাজার টাকায়, যা আগে ছিল ১৪ হাজার টাকা ও ছোট পানের প্রতি গাদি বিক্রি হচ্ছে ছয় হাজার টাকা, যা আগে ছিল মাত্র ২ হাজার টাকা।  

পাইকারি পান বিক্রেতারা বলছেন, শৈত্যপ্রবাহ ও কম বৃষ্টির হওয়ায় আবার বৃষ্টির পানি না সরতে পারায় এ বছর পানের ফলনে ক্ষতি হয়েছে। এতে চাহিদা অনুযায়ী বাজারে পানের যোগান কম থাকায় পানের বাজারের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

মহানগরীর সাত রাস্তার মোড়ের বিখ্যাত ছাচি পানের দোকান দেলোয়ার স্টোরের মালিক মো. বেলাল বাংলানিউজকে বলেন, শীতকালে সব সময়ই পানে দাম বেশি হয়। গতবছরও বেশি ছিল। তবে এবার সবচেয়ে বেশি। মোকামেই দাম বেশি হওয়ায় পানের দাম বেড়েছে।  

তিনি জানান, আগে যে পান ২৮০ টাকায় পোন কিনতাম তা এবার ৩০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আর ৩০০ টাকায় যা কিনতাম তা ৩২০ টাকায়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৯
এমআরএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।