ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শত বছর পর স্থানান্তর হচ্ছে ফেনী জেলা কারাগার

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৯
শত বছর পর স্থানান্তর হচ্ছে ফেনী জেলা কারাগার পুরাতন ভবন থেকে স্থানান্তর করা হচ্ছে বন্দি। ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: ১৯১৫ সালে নির্মিত ফেনী শহরের মাস্টার পাড়ায় কারাগারটি ছিলো জেলার একমাত্র কারাগার। ১০৪ বছর পর ২০১৯ সালে এসে কারাগারটি স্থানান্তরিত হচ্ছে শহরের কাজীরবাগ ইউনিয়নের রাণীরহাট সংলগ্ন নতুন ঠিকানায়। 

শত বছরের পুরোনো কারাগারটি ঘিরে দীর্ঘ সময়ের কারাবন্দি এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনদের রয়েছে নানান বেদনা বিদুর স্মৃতি। এক সময় যে প্রাঙ্গণটি ছিলো লোকে লোকারণ্য, নতুন ভবনে স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে তা এখন হয়ে যাবে নিষ্প্রভ এক স্মৃতিময় ঠিকানা।

কারাগারটি স্থানান্তরকে ঘিরে এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রানান্তকর প্রচেষ্টা ছিলো চোখে পড়ার মতো। বন্দি স্থানান্তরকে ঘিরে জেলার সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সতর্ক দৃষ্টি ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মাধ্যমে শনিবার (১২ জানুয়ারি) ভোর ৬টা থেকে নতুন ভবনে প্রায় ১ হাজার বন্দি স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।  

এর আগে শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) থেকে কারাগারের দলিল, দস্তাবেজ ও আসবাবপত্র স্থানান্তর হয়। শনিবার দুপুরের মধ্যে ৭৮৫ জন কারাবন্দিকে স্থানান্তরের কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানান কারা কর্তৃপক্ষ।
জেলা কারাগারের নতুন ভবন।  ছবি: বাংলানিউজগেল বছরের ১ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন কারাগারটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩৫০ বন্দি ধারণ ক্ষমতার এ জেলা কারাগারটি সম্পূর্ণ সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাছাড়া বন্দি ও কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য থাকছে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা। এর মধ্যে রয়েছে- একটি দ্বিতল আধুনিক হাসপাতাল, বন্দিদের কাউন্সেলিং এবং তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। খেলার মাঠ, পুকুর, উদ্যান, স্টাফ কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন স্থাপনাও রয়েছে।

অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধার এ কারাগারটি বন্দিদের বন্দি জীবনকে নিরাপদ, স্বস্তিদায়ক ও তাদের পরিশুদ্ধ করে নতুন জীবন গড়তে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কারাগার সূত্র জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় রাণীরহাটের সোনাপুর ও মালিপুর দুই মৌজায় নতুন কারাগার নির্মাণের জন্য সাড়ে ৭ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। জেলা গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন কারাগারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। নতুন ও পুরাতন ভবন।  ছবি: বাংলানিউজএর আগে ১৯১৫ সালে নির্মিত ফেনী শহরের মাস্টার পাড়ায় অবস্থিত উপ-কারাগারটি ছিলো জেলার একমাত্র কারাগার। ১৯৯৮ সালে এটি জেলা কারাগারে উন্নতি হলেও বাড়েনি কোনো সুযোগ-সুবিধা। ১৭৩ জন ধারণ ক্ষমতার সাবেক কারাগারটিতে প্রায় হাজার খানেক কারাবন্দি গাদাগাদি করে শোয়া, থাকা-খাওয়া, গোসলসহ নানা সমস্যায় দুর্বিষহ দিন পার করছেন। বন্দিদের চিকিৎসায় কারাগারে ছিলো না কোনো হাসপাতাল।

জেলা কারাগারের সুপার মো. রফিকুল কাদের বলেন, কারাগারটি স্থানান্তরের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বন্দিদের দুর্ভোগ লাগব হবে, আবাসন সমস্যার সমাধান হবে। বন্দিরা পাবে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা।  

তবে নতুন কারাগারটি পরিচালনায় আরো জনবল প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।  

তিনি বলেন, বর্তমানে আগের কারাগারে কর্মকতা-কর্মচারী মিলে ৮৭ জনের স্থলে ৭৭ জন জনবল ছিলো। নতুন কারাগারে অফিসার ছাড়াই ১১৬ জন কারারক্ষীর প্রয়োজন পড়বে।  
 
জেলার দিদারুল আলম বলেন, আগে স্থান সংকুলান না থাকায় চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লায় বন্দি পাঠানো হতো। বর্তমানে সে সমস্যা নেই। বন্দিদের মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করা যাবে। এছাড়াও বন্দিদের জন্য কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।  

কারা উপ-মহাপরিদর্শক (চট্টগ্রাম বিভাগ) এ কে এম ফজলুল হক বলেন, আগের কারাগারটিতে ১৭২ জনের স্থলে প্রায় হাজার খানেক বন্দি থাকতেন। নতুন কারাগারে স্থানান্তরের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হবে। এখানে বন্দিদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। আশা করছি, নতুন কারাগারটিতে তারা স্বাচ্ছন্দবোধ করবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১২০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৯
এসএইচডি/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।