রোববার (২৭ অক্টোবর) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, কর্মী পাঠাতে বদনাম হলে আমার হবে।
বিদেশে কর্মী মারা গেলে তদন্ত হয় কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কোনো দেশে যদি বাংলাদেশি কর্মী মারা যান তাহলে সে দেশেই তার মৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত ও ময়নাতদন্ত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে মরদেহ দেশে এলে আমরা ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে থাকি। তারপর যদি মৃত ব্যক্তি বৈধ হয়ে থাকে তাহলে তাকে তিন লাখ টাকা দিয়ে থাকি। কিন্তু সম্প্রতি ২০০ জন সৌদি আবর থেকে ফেরত এসেছে। এদের মধ্যে অনেকেই বৈধ বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন এসেছে। তবে মনে রাখতে হবে যারা বিদেশ যান তারা এক স্থানের অনুমতি নিয়ে যান। পরে তারা সে স্থান ত্যাগ করে অন্য স্থানে চলে যায়। এতে করে তারা তাদের কার্ডের মেয়াদ থাকলেও অবৈধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করে তাদের নাম ঠিকানায় খোঁজ নিচ্ছি কোন এজেন্ট তাদের পাঠিয়েছে। কেন কীভাবে পাঠিয়েছে এসব আমরা বের করছি। যেখানে অনিয়ম পাবো। আমি কথা দিচ্ছি সেখানেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবো। এখানে কাউকে ছাড় দিতে রাজি না। এতে বদনাম হলে আমার হবে। আর সুনাম হলে দেশের হবে। দেশের সুনামই আমার প্রয়োজন। আমরা এজন্য অ্যাকশনে গিয়েছি। এখন তদন্ত করছি।
চলতি বছরের নয় মাসে ১৫ শতাংশ কর্মীর বিদেশ যাওয়া কমেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খবর অনেক রয়েছে। আশা করছি আপনারা ভালো খবর পাবেন। সিচেলেসে বাজার খুলেছে। সবাই মালয়েশিয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। জাপানে কর্মী যাচ্ছে। চায়নাতেও আলোচনা হচ্ছে। ছোট আকারে হলেও জাপানের বাজার খুলেছে। ছোট আকার হলেও আমরা কোনো বাজারকে ছোট করে দেখি না।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে রোমানিয়া, পোল্যান্ড, ক্যাম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ক্রোয়েশিয়া, হাঙ্গেরি থেকে ডিমান্ড এসেছে। ইতোমধ্যে আমাদের টিম কাজ করছে এর কোনটিকে আমরা পেছনে রাখছি না। কোনো বাজার থেকে খবর এলে আমরা বিমানে উঠার জন্য তৈরি।
শ্রমবাজার কমে আসছে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী তিনি বলেন, এখানে একটি পলিসি কাজ করে। আগে আরবীরা কাজ করতো না। এখন তারা নিজেরাই কাজ করছে। এছাড়া আমরা গিয়ে অবৈধ পজিশনে চলে যাই। এর একটা প্রভাব পরে শ্রম বাজারে। একারণে মধ্যপ্রাচ্য বাজারের ডিমান্ড একটু কমেছে। তবে এতে আমাদের থেকে ভারত পাকিন্তানের বেশি ক্ষতি হয়েছে। এখন যদি আমরা দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারি। আমরাই এগিয়ে যাবো।
জাপানে কর্মী পাঠাতে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিদের জন্য আলাদা নীতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেসরকারি এজেন্সিদের জন্য নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। প্রথমে ১১টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এরমধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান কোনো কিছু না করেই কর্মীদের কাছ থেকে ১০ লাখ করে টাকা নিচ্ছে এমন খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও জাপানে লোক পাঠাতে কোনো টাকা নিতে পারবে না।
তিনি বলেন, জাপান যেতে কোনো টাকা লাগবে না। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা নির্ধারণ করে দেবো। তাই কেউ যেন কোনো টাকা লেনদেন না করে। তবে ভাষা শিক্ষার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিচ্ছে। এটা নির্ধারণ করতে কাজ চলছে। তবে ভাষা প্রশিক্ষণেই শেষ না প্রশিক্ষণের পর পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষায় পাসের পর আরও দুই তিন মাস বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কারণ জাপান শতভাগ প্রশিক্ষিত না হলে কর্মী নেবে না। জাপানে কর্মী পাঠাতে সেন্ডিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধিত হতে হবে।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, শিগগিরই মালয়েশিয়ার বাজার খুলবে। আগামী মাসের ৬ তারিখে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে আলোচনা করা হবে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের শ্রমিকের চাহিদা অনেক বেশি রয়েছে। নতুন করে এ শ্রমবাজার খোলা হলে প্রথম বছরে দেড় থেকে দুই লাখ শ্রমিক যেতে পারবে। কিন্তু মালয়েশিয়ার বাজারে একটি চক্র রয়েছে। তারা নানাভাবে কর্মী পাঠাচ্ছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছি।
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১৯
জিসিজি/আরআইএস/