পাশাপাশি প্রকাশিত তালিকা তৈরির সঙ্গে যুক্তদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে এই সংবাদ সম্মেলন থেকে।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় নগরের ফকিরবাড়ি সড়কের দলীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বাসদের সদস্যসচিব ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ডা. মনীষা চক্রবর্তী লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিজয়ের ৪৮ বছর পরে রাজাকারদের তালিকা তৈরির নামে এক মর্মান্তিক প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ হলো। সারাদেশে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারীদের নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হলো। এ তালিকা নিয়ে সারাদেশের মানুষের আন্দোলন-ক্ষোভ-বিক্ষোভ, যুক্তি-তর্কের মুখে শেষ পর্যন্ত এটি স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা দেশবাসীর কাছে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরতে চাই। সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধের মতো এমন একটা স্পর্শকাতর বিষয়ে রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্যদের নাম কীভাবে যুক্ত হলো? কারা এই চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত? এগুলো অবিলম্বে চিহ্নিত করতে হবে এবং চক্রান্তকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
এমন উদ্দেশ্যমূলকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় করার তালিকাটি কেন বাতিল না করে স্থগিত করা হলো, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বরাষ্ট্র, উভয় মন্ত্রণালয় এই তালিকা প্রণয়নে কোনোরকম যাচাই-বাছাই না করার কথা স্বীকার করেছে। আমরা অবিলম্বে এই তালিকাটি বাতিল করে গণতান্ত্রিক
পদ্ধতিতে প্রকৃত রাজাকারদের তালিকা প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছি। ’
মনীষা চক্রবর্তী বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, কোনো মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য রাজাকার তালিকা থেকে নাম কাটানোর আবেদন করা চরম লজ্জা আর অপমানের বিষয়। তাই কোনোভাবেই তাদের এই অপমান করা যাবে না। বরং মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে অবিলম্বে এই পরিবারগুলোর কাছে ক্ষমা চেয়ে লিখিত চিঠি পাঠানোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের পরস্পরবিরোধী দোষারোপের বক্তব্যের মাধ্যমে এই দুই মন্ত্রণালয়ের চরম অবহেলা এবং অদক্ষতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। অবিলম্বে এই দুই মন্ত্রণালয়ের অবহেলার বিষয়টি তদন্ত করে জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে, জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রীর চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডের জন্য তার পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি।
‘ইতোপূর্বে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করে ২ বছর চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো ৪ জন সচিব বা মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যকারী বিদেশিদের স্বর্ণপদকের নামে লুটের ঘটনাগুলোর কোনো বিচার হয়নি। এ ধরনের বিচারহীনতার ফলেই আজ আরও বড় ধরনের অন্যায় সংগঠিত হলো। এধরনের
ঘটনাগুলোর কোনো তদন্ত রিপোর্ট কেন জনসম্মুখে প্রকাশিত হলো না, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। ’
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী যদি পূর্বের কোনো তালিকা একটা পেনড্রাইভে দেওয়া হয় এবং তা হুবহু তুলে ধরা হয়, তাহলে এই তালিকার জন্য বরাদ্দকৃত ৬০ কোটি টাকা কীভাবে, কোথায় খরচ হলো? তার শ্বেতপত্র জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। লুটপাটি-দু্র্নীতি হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
মনীষা বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বাস্তবতায় রাজাকারের তালিকা প্রণয়ন অবশ্যই জরুরি। রাজাকারদের তালিকা প্রস্তুত করতে আলাদা কমিশন গঠন করতে হবে। এখনও গ্রাম-শহরে অনেক মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে আছেন। বেঁচে আছেন সেসময়ে মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করা অনেক বয়স্ক মানুষ। দল-মত নির্বিশেষে প্রথমে কমিশন এ ধরনের মানুষদের যুক্ত করে সারাদেশের একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুত করে তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জনসম্মুখে প্রকাশ করবে। এরপর আপত্তি জানানোর সুযোগ থাকবে। পরবর্তীতে সেগুলো তদন্ত করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করতে হবে। কোনোভাবেই আমলা বা দলনির্ভর তালিকা গ্রহণযোগ্য হবে না।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশের আন্দোলন এবং আপনাদের ভূমিকা না থাকলে মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ অবদানের পরও মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যদের বাকি জীবনটা কতটা অপমান, লজ্জা আর কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেত তা আমাদের অনুমান করা কঠিন। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর রাজাকারের তালিকা তৈরিতে সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম এবং প্রতিপক্ষকে হেয় করার মানসিকতায় আজ পুরো জাতি স্তব্ধ। তাই এ বিষয়ে আগের মতো সময়ক্ষেপণ করে ধামাচাপা দেওয়া যাবে না। এর সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়া না হলে এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে রাজাকারের তালিকা প্রণয়ন করা না হলে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর দুঃখ প্রকাশ ও তালিকা স্থগিতে আমরা ক্ষান্ত হবো না। লড়াইয়ের মাধ্যমেই আমরা দাবি আদায়ে সচেষ্ট হবো।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বাসদের আহ্বায়ন ইমরান হাবিব রুম্মনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন
বাংরাদেশ সময়: ১৩০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯
এমএস/এসএ/