শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এ এলাকা ঘুরে দেখা যায় উচ্ছেদ আতঙ্কে ভ্যান-রিকশায় মালামাল তুলে যে যেভাবে পারছেন বাসা বদলাচ্ছেন। এর জেরে দুয়ারীপাড়া মোড়ের প্রধান সড়কে যানজট দেখা দেয়।
উচ্ছেদ অভিযানের ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সেই ১৯৯৩ সাল থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য জমি লিজ নিয়ে এখানে বসবাস করছি। কিন্তু হঠাৎই গতকাল শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মাইকিং করে বলা হয় বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। ২২ থেকে ৩১ ডিসেম্বর এখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। এখন আমরা কোথায় যাব, কোথায় থাকবো, সব মিলিয়ে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছি। আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই বলে আর কিছু রইলো না।
এলাকার আরেক বাসিন্দা প্রাক্তন সৈনিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবদুস শুকুর খান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। আমরা এখন কোথায় যাবো, কোথায় থাকবো? অথচ নভেম্বর মাসে যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালত উচ্ছেদের ব্যাপারে স্টে অর্ডার জারি করেন। ১০ দিনের মধ্যে গৃহায়ন মন্ত্রণালয়কে জবাব দিতে বলেন আদালত। কিন্তু কোর্টের আদেশ অমান্য করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আমাদের উচ্ছেদ করতে চাইছে।
দুয়ারীপাড়া বাড়ি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন বলেন, দুয়ারীপাড়া ওয়াক্ফ এস্টেট এলাকাটি ২৩ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত। এলাকার প্রায় ৪৭৪টি প্লটে আমরা ১ লাখের মতো লোক বসবাস করছি। আমাদের সঙ্গে ঠিক ভাষানটেকের উচ্ছেদ অভিযানের মতো ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। ভাষানটেকে উচ্ছেদ অভিযানের সময় আগের দিন সন্ধ্যাবেলায় মাইকিং করে বলা হয়। ঠিক একইভাবে শুক্রবার রাতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মাইকিং করে আমাদের উচ্ছেদ করার কথা জানানো হয়। এখন এতোগুলো মানুষ কোথায় যাবে? কোথায় থাকবে তারা এই শীতের মধ্যে?
এ ব্যাপারে রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২২ থেকে ৩১ ডিসেম্বর গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবে। এর মধ্যে ২৫, ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর সরকারি ছুটি থাকায় উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ থাকবে। তারা আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে। অভিযান চলাকালীন ২ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের ২ জন আইনি কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। কেউ যদি সঠিক কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারে তারা সহযোগিতা পাবে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে এরই মাঝে রূপনগর থানায় বেশ কয়েকটি জিডি হয়েছে। আমরা বলেছি, এ ব্যাপারে আইনগতভাবে তাদেরকে কোনো সহযোগিতা করতে পারব না। বরং তাদের কাছে কাগজপত্র থাকলে গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করতে। যৌক্তিক ও বৈধ কাগজপত্র হলে তারা গ্রহণ করবে।
উচ্ছেদ প্রসঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১২টি সংস্থা আছে। যে উইং উচ্ছেদ অভিযান চালাবে তাদের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ফলে আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবো না।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘণ্টা, ২১ ডিসেম্বর , ২০১৯
এমএমআই/এইচজে