ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদকে নিয়ে রোববার (২২ ডিসেম্বর) বাংলানিউজকে এভাবেই বলছিলেন উন্নয়নকর্মী এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। তার মতে কাজ ভালোবাসা এই মানুষটি তৃণমূল থেকে যখন উপরে উঠেছেন, তখন তৃণমূলকে ভুলে যাননি, তাদের আঁকড়েই থাকতে চেয়েছেন একটু আড়ালে।
সত্যিই তাই, যশোর থেকে ফজলে হাসান আবেদের মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে আসা ব্র্যাক লারনিং সেন্টারের ড্রাইভার রেজাউল ইসলামও জানালেন তেমন কথাই। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, স্যার একবার যশোর গেছেন কাজে। তার থাকার ব্যবস্থা করা হলো সার্কিট হাউজে। সার্কিট হাউজের বারান্দায় আবেদ স্যার পাইপ হাতে পায়চারি করছেন। এর কিছু পরে ডিসি আসলেন এবং আমাদের ওখানকার স্যারের সঙ্গে খাতির করে কথা বলতে শুরু করলেন। এরপর তিনিই আবেদ স্যারের সঙ্গে ডিসির পরিচয় করিয়ে দেন। একটা এতবড় মানুষ হয়েও তিনি যে কীভাবে নিজেকে লুকিয়ে রাখতেন, তা না দেখলে বোঝা যায় না!
কথা বলার এ পর্যায়ে গলা ভারি হয়ে আসে রেজাউল ইসলামের। শেষ করতে কষ্ট হয় শেষ দুটো বাক্য। ধরা গলা নিয়েই বলেন, স্যারের সঙ্গে শুধু একবারই দেখা হয়েছে। খুব ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। সত্যিই তাই। নিজের গুণ দিয়ে মহান এই মানুষটি বাংলাদেশকে ছড়িয়ে দিয়েছেন সারাবিশ্বে। এমনটাই মত সাবেক নির্বাচন কমিশনার শামসুল হুদার।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ আজ যে অবস্থানে আছে, তার পেছনে ভূমিকা আছে মহান এই মানুষটির। নিজের কাজ দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন মহাদেশে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। আর তার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ব্র্যাকের সাবেক গভর্নিং বডির সদস্য ও বেঙ্গলের পরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী বলেন, লিডার হিসেবে একজন মানুষের যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন, দৃঢ়তা, লক্ষ্য, দৃষ্টিভঙ্গি, আন্তর্জাতিক বোধ, তার সবই ছিলো আবেদ স্যারের।
সংস্কৃতিকর্মী সারা যাকের বলেন, স্যারের দ্বার উন্মুক্ত ছিলো সবার জন্য। অত্যন্ত আন্তরিক এই মানুষটির দুয়ারে কোনো কাজ বা প্রশ্ন নিয়ে গিয়ে কেউ কোনোদিন খালি হাতে ফিরে আসেনি। এমনকি অসুস্থ হওয়ার পরেও তিনি তার কাজ নিয়ে ভেবেছেন, দেশ নিয়ে ভেবেছেন। তাকে হারিয়ে আমরা শোকাহত। এই শোকের কেন্দ্রবিন্দুটির আরেক নাম অনুপ্রেরণা বলে জানালেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ফজলে হাসান আবেদ ছিলেন অনুপ্রেরণা। তিনি যে পথ রচনা করে গেছেন, আমরা তা অনুসরণ করবো। অনুপ্রেরণার এই মানুষটি শুধু কাজ ভালোবেসেছেন তাই নয়, ভালোবাসতেন তার পরিবারকেও।
এ বিষয়ে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক এবং ফজলে হাসান আবেদের জামাতা আসিফ সালেক বলেন, যেকোনো মানুষ, প্রত্যেকেরই তার সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিলো। তার সঙ্গে প্রত্যেকের একটা গল্প আছে। তিনি সবার কথা মন দিয়ে শুনতেন এবং সে অনুযায়ী উপদেশ দিতেন। তবে উপদেশগুলো নীতিবাক্য নয়, জীবনধর্মী। আর সন্তানদের সময় দেওয়া, প্রতিষ্ঠান সামলানো, বইপড়া, সাহিত্য সমঝদার, কোনো দিকেই তার কমতি ছিল না। বাংলাদেশের অনেকগুলো এনজিওর প্রতিষ্ঠাকালীন উপদেষ্টা তিনি। প্রায় সবগুলো এনজিওর পেছনে থেকে তিনি দায়িত্ব পালন করে গেছেন বড় ধরনের ভূমিকার।
এর আগে রোববার (২২ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত স্যার ফজলে হাসান আবেদের মরদেহ আর্মি স্টেডিয়ামেই রাখা হয় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। পরে শ্রদ্ধা নিবেদনের শেষে স্টেডিয়ামেই তার জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজা শেষে দুপুর ১টায় বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয় সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ ব্যক্তিত্বকে। রোববার দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে প্রিয়তমা স্ত্রীর (প্রথম স্ত্রী আয়েশা আবেদ) কবরেই শায়িত হলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাত ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৯
এইচএমএস/এএটি
**স্ত্রীর কবরে শায়িত হলেন স্যার আবেদ
** স্যার আবেদের কফিনে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা
** স্যার আবেদকে শ্রদ্ধা জানাতে আর্মি স্টেডিয়ামে জনতার ঢল
** মানবসেবার অনন্য দৃষ্টান্ত স্যার ফজলে হাসান আবেদ
** ‘স্যার আবেদ বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন’
** আবেদের জীবন থেকে তরুণদের শিক্ষা নেওয়ার পরামর্শ ইউনূসের
** স্যার ফজলে হাসান আবেদের শ্রদ্ধায় শোকবই
** ‘গরিব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে গেছেন স্যার আবেদ’
** স্যার আবেদের অবদান বিশ্ব স্মরণ রাখবে: ফখরুল
** চোখের জলে স্যার ফজলে হাসান আবেদকে বিদায়