ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অবশেষে নীলসাগরে লাগছে না বনলতা’র বগি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৯
অবশেষে নীলসাগরে লাগছে না বনলতা’র বগি নীলসাগরে লাগছে না বনলতা’র বগি

রাজশাহী: রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেন ‘বনলতা’র বগি শেষ পর্যন্ত নীলসাগরে লাগছে না। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন, খোদ রেলমন্ত্রী তাকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আগামী শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) থেকে ভারতীয় কোচ দিয়ে চলাচল করার কথা ছিল বনলতা এক্সপ্রেসের।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে এই তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন, ‘রেলমন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। বনলতা ট্রেনের বগি পরিবর্তন করা হবে না’।

এর আগে বনলতা আন্তঃনগর ট্রেনের ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা বগিগুলো সরিয়ে ভারতীয় বগি সংযোজন করা হচ্ছে- এমন একটি খবর ছড়িয়ে পড়লে রেলযাত্রীসহ রাজশাহীর সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। রাজশাহী-ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী প্রথম বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন বনলতা এক্সপ্রেসে থাকা ইন্দোনেশিয়ার আরামদায়ক কোচগুলো বদল করার সিদ্ধান্ত হয় নীলসাগর ট্রেনের ভারতীয় কোচের সঙ্গে। বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর মাত্র আট মাসের মাথায় ঝকঝকে নতুন কোচগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হয় নীলসাগর ট্রেনের জন্য চিলাহাটীতে।

একইভাবে নীলসাগর ট্রেনের ভারতীয় কোচ বনলতায় সংযোজন করার জন্য আনা হয় রাজশাহীতে। এই অদল বদলের ফলে ট্রেনের আসন বিন্যাস সংক্রান্ত জটিলতায় গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে অাগাম টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখা হয়। পরে রোববার(২২ ডিসেম্বর) থেকে আবারও আগাম টিকিট বিক্রি কার্যক্রম শুরু করা হয়।

বলা হচ্ছিল, এই রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটি, পদ্মা ও ধূমকেতু বর্তমানে দুইটি রেকে চলাচল করছে। বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের রেক একই কম্পোজিশনে হলে তখন তিনটি রেকে চারটি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই রুটের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর সিডিউল ঠিক রাখা সম্ভব হবে।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ব্যবস্থাপক আবদুল করিম জানান, বর্তমানে একটি রেকের মাধ্যমে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুইদিক থেকে চলাচল করে। এতে ট্রেনটি কোনো কারণে একদিকে বিলম্ব ঘটালে পরদিন সিডিউল ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া মাত্র দু’টি রেক দিয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচল করছে সিল্কসিটি, পদ্মা ও ধূমকেতু এক্সপ্রেস নামের আরও তিনটি আন্তঃনগর ট্রেন।

যে ট্রেনটি সিল্কসিটি হয়ে ঢাকায় যায় সেটি ফেরার সময় ধূমকেতু হয়ে আবার রাজশাহীতে ফেরে। বনলতার জন্য বিপরীতমুখী দু’টি আলাদা রেক (ট্রেনের সব কোচ মিলে একটি রেক) না থাকায় বিরতিহীন ট্রেনটির সিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। ফলে ভারত থেকে আমদানিকৃত কোচের মাধ্যমে একটি অতিরিক্ত রেক সংযোজন করা হচ্ছে। এছাড়া অন্য আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতেও নতুন কোচ সংযোজন বিয়োজন করা হচ্ছে।

নতুন রেকটি অপেক্ষমাণ থাকবে রাজশাহী স্টেশনে। ফলে রাজশাহীতে আন্তঃনগর মোট চারটি ট্রেনের জন্য চারটি রেক থাকছে। এতে কোনো একটি ট্রেনে রাজশাহীতে ফিরতে বিলম্ব করলে অপেক্ষমাণ রেকটি দিয়ে ফিরতি ট্রেনটি ঠিক সময়ে ছাড়া যাবে। আর এজন্যই বনলতায় ভারতীয় কোচ সংযোজন করা হচ্ছে। অন্যগুলোর কোচও সংযোজন বিয়োজন করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন আবদুল করিম জানান।

তবে এ নিয়ে রাজশাহীর রেল যাত্রী ও রেলভক্তরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান মন্তব্যের ঝড় তোলেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ে ফান গ্রুপে জিসু নামের এক রেলভক্ত তার যুক্তি তুলে ধরে বলেন, আন্তঃনগর ট্রেন পদ্মার রেক এসেই কিন্তু পরের দিন সিল্কসিটি হবে আর পদ্মা প্রতিদিন রাইট টাইমে রাজশাহী এখনো ছাড়ে কিন্তু পরের দিনের সিল্কসিটি আর রাইট টাইমে ছাড়তে পারে না। তাই রেক শেয়ারিংয়ে লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই।

এখন ধূমকেতু রাজশাহী থেকে ছাড়তে অনেক বিলম্ব হয়। এছাড়া পথে আরও সময় বাড়ে। কারণ সিল্কসিটির রেক দিয়ে ধূমকেতু চালানো হয়। যারা ভাবছেন যাক এখন বনলতার রেক পাবো, মানে ধূমকেতু রাইট টাইম হবে! তাদের ধারণা ভুল।

এখনকার মতো পরেও ধূমকেতুর রেক দিয়েই পদ্মা ছেড়ে যাবে। মানে পদ্মা এখন যেভাবে চলছে তখনও সেভাবেই চলবে। মাঝ থেকে কোনো লাভই হবে না এই রেক শেয়ারিং করে। আর এই শেয়ারিং যাত্রী বান্ধবও না বলে দাবি করেন তিনি।

এর আগে চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচল শুরু করে আন্তঃনগর ট্রেন বনলতা এক্সপ্রেস। এ রুটে এটিই প্রথম বিরতিহীন ট্রেন। গত ১৭ জুলাই থেকে ট্রেনটির চলাচল চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।

৭৯১ আপ ও ৭৯২ ডাউন বনলতা বিরতিহীন এক্সপ্রেস ট্রেনটি পরিচালনা করা হয় একটি রেকের সাহায্যে। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বনলতা আপ-৭৯১ ট্রেনটি ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছেড়ে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছায়। একই ট্রেনটি ডাউন ৭৯২ হয়ে বেলা ১টা ৩০ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশনে পৌঁছে। ৩৪৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রমে ট্রেনটির সময় লাগে মাত্র ৪ ঘণ্টা ৪০ মিনিট।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৯
এসএস/ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।