স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নির্মাণ কাজ চলাকালীন সময়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে বসে যায়। তখন ঠিকাদার দায়সারাভাবে ওই স্থানগুলো সংস্কার করে।
জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ফরিদপুর উপজেলা অফিস ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উপজেলার পারফরিদপুর থেকে বিএলবাড়ী গ্রাম পর্যন্ত ৬ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণ কাজের ব্যয় ধরা হয় ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। কাজটি পায় রাজশাহীর ঠিকাদার আব্দুল আওয়াল। কিন্তু তিনি কাজটি নিজে না করে বিক্রি করে দেন পাবনার ঠিকাদার শাহনেওয়াজ আলীর কাছে। ২০১৬ সালের শেষের দিকে কাজটি শুরু হয়। এরপর ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ঠিকাদার শাহনেওয়াজ ৫০ শতাংশ বিল তুলে নিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকার পর উপজেলা প্রকৌশল অফিস ঠিকাদার আব্দুল আওয়ালকে কাজ শেষ করার জন্য চাপ দেন। পরে আব্দুল আওয়াল নিজেই কাজ শুরু করেন। এসময় ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা প্রকৌশল অফিস কাজটির জন্য বরাদ্দকৃত ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ কোটি ৩৬ হাজার ১৬৫ টাকা নির্ধারণ করেন। এরপর চলতি বছরের জুন মাসে সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছয় কিলোমিটার সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক দেওভোগ গ্রামের খালের ভেতরের এক পাশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। খালের ভেতরের সড়ক নির্মাণের অংশ বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। তবে বালুর ওপর সামান্য কিছু মাটিও ব্যবহার করা হয়। সড়ক ধসে পড়া ঠেকাতে খালের নিচে থেকে কার্পেটিং পর্যন্ত আরসিসি ব্লক দেওয়া হয়েছে। এসব ব্লক বসানো হয়েছে এলোমেলো ও দায়সারাভাবে। ফলে বৃষ্টিতে ব্লকের জোড়ার স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করে সড়কের ভেতরের বালু ধুয়ে যায়। এছাড়া ব্লকের মূল ভিত্তিতে খালের মধ্য গাইডওয়াল নির্মাণের কথা থাকলেও পানি প্রবাহের কারণে অনেক স্থানেই তা নির্মাণ সম্ভব হয়নি। আর কিছু জায়গায় গাইডওয়াল নির্মাণ করা হলেও শুরু থেকেই তা হেলে পড়েছিল। এ অবস্থায় গাইডওয়াল ও ব্লকসহ সড়ক ধসে পড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক নির্মাণে ব্লক ও গাইডওয়াল নির্মাণে অনিয়মের কারণেই সড়কের এই বেহাল দশা হয়েছে।
দেওভোগ গ্রামের স্কুল শিক্ষক নুরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, সড়ক নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই অনিয়ম লক্ষ্য করা যায়। নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে এলে প্রকৌশল অফিসের কর্মকর্তাদের অনিয়মের বিষয়ে জানানো হয়। কিন্তু কাজের মানের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে কিছুদিন যেতেই সড়ক ভেঙে গেছে।
বিএলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা সড়ক ছয় মাস পার না হতেই ধসে পড়ায় আমরা খুবই হতাশ। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সড়কের বাকিও অংশ যেকোনো সময় ধসে পড়বে।
সড়ক নির্মাণ কাজের তদারকি কর্মকর্তা ফরিদপুর উপজেলা প্রকৌশল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইসলাম আলী বলেন, ঠিকাদারের নিজস্ব অর্থায়নে সড়কটি পুনরায় মেরামত করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সড়ক নির্মাণ কাজের মান খুব ভাল ছিল। কিন্তু চলতি বছর বন্যার পানি চলে আসার কারণে শেষ মুহূর্তে কিছু কাজ তড়িঘড়ি করে করা হয়। এতে সড়ক ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে সমস্যা হবে না। ঠিকাদারের পর্যাপ্ত টাকা সিকিউরিটি হিসেবে অফিসে জমা আছে। তারা নিজ দায়িত্বেই পুনরায় সড়ক মেরামত করে দেবে। এতে সরকারের অর্থের কোনো অপচয় হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৯
এনটি