ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘অর্থনৈতিক সংকট থেকে দৃষ্টি ফেরাতেই ভারতে বিভাজন সৃষ্টি’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
‘অর্থনৈতিক সংকট থেকে দৃষ্টি ফেরাতেই ভারতে বিভাজন সৃষ্টি’

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বর্তমান সময়ে চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভারত। এই সংকট থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতেই এনআরসির (নাগরিক পঞ্জি) নামে বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলানায়তনে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে ‘ভারতের এনআরসি এবং সিএএ: দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব ও বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রতিবেশীর গায়ে আগুন লাগলে তা আমাদের গায়েও লাগবে।

আমাদের এই উপমহাদেশ কখনোই এক জাতির দেশ ছিল না। ভারতবর্ষ সবসময়ই বহুজাতির দেশ ছিল। ভারতে বাঙালি, কাশ্মীরি, আসামি, তারা কখনোই এক জাতি না। ভারতের মূল সমস্যা হচ্ছে শ্রেণিগত। তবে শ্রেণিগত সমস্যাটা জাতিগত সমস্যার অভ্যন্তরে চাপা পড়ে গিয়েছিল।

ভারতবর্ষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় বলেছিল, ভারতে কম করে হলেও ১৭টি জাতিসত্তার লোক রয়েছে। প্রতিটা জাতিসত্তার প্রত্যেকেরই আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার থাকবে। তারা সবাই একসঙ্গে বৃটিশদের বিরুদ্ধে লড়বে।

পাকিস্তান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাকিস্তান কমপক্ষে পাঁচটি জাতির সমন্বয়ে একটি রাষ্ট্র নামক কারাগার ছিল। সেখানে পাঞ্জাবি, বাঙালি, বেলুচ, সিন্ধি, পাঠান আছে। বাংলাদেশ সেই কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছে। এখন আমরা দেখছি পাকিস্তানে বেলুচরা আন্দোলন করছে এই কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য।

তিনি আরও বলেন, ভারতকে এক জাতির দেশ বলেছিল কংগ্রেস। এর প্রতিক্রিয়ায় মুসলিম লীগ বলেছিল ভারত দুই জাতির দেশ। কিন্তু ভারত এক বা দুই নয়, বহুজাতির দেশ। সেটাই এখন প্রমাণিত হচ্ছে এবং ভারতকে এটা স্বীকার করে নিতে হবে। ভারত জাতিগুলোর কারাগারে পরিণত হয়ে কখনোই টিকে থাকতে পারবে না। এখন যেটা হচ্ছে, এই কারাগার ভেঙে বিভিন্ন জাতি বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

ভারতের এনআরসি’র কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতকে হিন্দু রাজ্যে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা করা হচ্ছে অর্থনৈতিক কারণে। ভারত এখন চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছে। সেই সংকট থেকে মানুষের দৃষ্টি ফেরাতে, মানুষকে বিভক্ত, বিপথগামী, বিভক্ত করতেই এই আয়োজন।

পুঁজিবাদের সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা শুধু ভারতেই নয়, সারাবিশ্বেই বর্তমানে সংকট চলছে। পুঁজিবাদ এখন তার চরম বিপর্যয়ের জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। সেই জন্যই পুঁজিবাদ নানারকম বিভাজনকে কাজে লাগাচ্ছে টিকে থাকার জন্য। পুঁজিবাদ বর্ণের বিভাজন, উগ্র জাতীয়তাবাদের বিভাজন, জাতিগত সত্তার বিভাজন সৃষ্টি করছে। আজকে সারা বিশ্বের মানুষ এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে ভাঙার চেষ্টা করছে।

গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। আলোচনা করেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিশিষ্ট আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, সামাজিক আন্দোলনের কর্মী অরূপ রাহী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সায়মা চৌধুরী, স্বপন আদনান প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশের সরকার ভারতের এনআরসি এবং সিএএ’কে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলছে। কিন্তু এটা কখনোই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। এই বিষয়ের অভিঘাত দক্ষিণ এশিয়া, এমনকি বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশে এই অভিঘাত বেশি হবে।

‘বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে ইতোমধ্যে ভারত থেকে মানুষ আসা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ বড় ধরনের শরণার্থী সংকটে পড়তে পারে। ভারতে ঠিক যেমন উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির তৎপরতা সামনে আসছে, বাংলাদেশেও এমন একটা উগ্র সাম্প্রদায়িক তৎপরতা বাড়তে পারে। সেই সুযোগে বাংলাদেশের উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ চালাতে পারে। ’

বাংলাদেশের সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
আরকেআর/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।