ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভাঙা নিয়ে ক্ষুব্ধ সাংস্কৃতিক অঙ্গন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৯
ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভাঙা নিয়ে ক্ষুব্ধ সাংস্কৃতিক অঙ্গন

রাজশাহী: রাজশাহীতে সাইকেল গ্যারেজ নির্মাণের জন্য বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের পৈত্রিক বাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এরই মাঝে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেদের ইজারায় থাকা এ বাড়িটির একটি অংশ ভেঙে ফেলেছে। 

দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহাসিক এ বাড়িতে ‘ঋত্বিক চলচ্চিত্র কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা ও এটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছিল গোটা দেশের সংস্কৃতি কর্মীরা। কিন্তু তা না করে, সামান্য গ্যারেজ নির্মাণের উদ্দেশ্যে বাড়িটি ভেঙে ফেলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সংস্কৃতি অঙ্গনসহ দেশের সাধারণ মানুষ।

এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে এরই মাঝে তানভীর মোকাম্মেল, নাসির উদ্দীন ইউসুফসহ দেশের খ্যাতনামা ১২ চলচ্চিত্র নির্মাতা বিবৃতি দিয়েছেন।

এদিকে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালেদ বাবু কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক ভিটা রক্ষায় রাজশাহী জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরপরই বাড়ি ভাঙার কাজ বন্ধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হকের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।  

তবে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহম্মদ শরিফুল হক বলেন, আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষকে কাজ বন্ধ করতে বলেছি। বিষয়টি যাচাইবাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

রাজশাহী মহানগরীর মিঞাপাড়ায় অবস্থিত এ বাড়িতে ঋত্বিক ঘটকের শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের একটি বড় অংশ কেটেছে। এখানে থাকার সময় ঋত্বিক ঘটক রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়েছেন। এই বাড়িতে কিছু সময় বসবাস করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী। রাজশাহীর তৎকালীন সাংস্কৃতিক জগতে ঋত্বিক সবার মধ্যমণি হয়ে উঠেছিলেন। সে  সময়ে নাট্যান্দোলন ও সাহিত্য সম্পাদনা করেন তিনি। রাজশাহী কলেজ এবং মিঞাপাড়ার সাধারণ গ্রন্থাগার মাঠে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়েও নাট্যচর্চা করেন এ ঋত্বিক।

এছাড়া রাজশাহী থাকাকালীন ঋত্বিক কুমার ঘটক ‘অভিধারা’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। বিলুপ্ত কল্পনা সিনেমা হলে ‘ভাবীকাল’ নামে একটি চলচ্চিত্রের ব্যানারও তিনি এঁকেছিলেন বলে জানা যায়। ১৯৮৯ সালে নামমাত্র মূল্যে এ বাড়িটি রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজকে ইজারা দেওয়া হয়। তখন থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষই বাড়িটি ব্যবহার করে আসছে।  

বাড়িটির একাংশে ইতোমধ্যেই বহুতল ভবন নির্মাণ করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। আরেক অংশের যেসব কক্ষে ঋত্বিক ঘটক থাকতেন, সেসব কক্ষও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে তারা। সম্প্রতি সে পাশের একটি অংশ ভেঙেই কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী সাইকেল গ্যারেজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়।  

ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভাঙা হচ্ছে।  ছবি- বাংলানিউজ

বাড়ি ভাঙার বিষয়টি জানাজনি হওয়ার পরপরই প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের মানুষ। এ বাড়ি সংরক্ষণের দাবিতে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজশাহী জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেয় রাজশাহীর ১৩টি প্রগতিশীল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।  

এছাড়া মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সম্মিলিত ব্যানারে রাজশাহীতে মানববন্ধন করেছে ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি, রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ এবং বরেন্দ্র ফিল্ম সোসাইটি। এর বাইরে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের উদ্যোগে আগামী ২৮ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় রাজধানীর জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনের সামনে মানববন্ধনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া মঙ্গলবার তানভীর মোকাম্মেলসহ ১২ জন চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিকের বাড়ি ভাঙায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন। এতে বলা হয়, বাংলা চলচ্চিত্রের নিজস্ব ভাষা নির্মাণে ঋত্বিক ঘটক একটি অবিস্মরণীয় নাম। তিনি আমাদের এই বাংলাদেশে জন্মেছিলেন এ আমাদের শ্লাঘার বিষয়। আমরা অনতিবিলম্বে তার ওই পৈত্রিকভিটায় ‘ঋত্বিক সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা এবং আমাদের চলচ্চিত্রের ঐতিহ্য রক্ষার খাতিরে ভবনটিকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করে স্থায়ী সমাধানের আহ্বান জানাচ্ছি। হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজটি ভিন্ন একটি স্থানে সরিয়ে ওই জায়গায় ‘ঋত্বিক চলচ্চিত্র কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করা হোক।

ঋত্বিক কুমার ঘটকের বাড়ি ভাঙা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. আনিসুর রহমান বলেন, এনিমি প্রোপার্টি হিসেবে সরকার এখানকার ৩৪ শতক জমি কলেজের নামে লিখে দেয়। সে হিসেবে পুরো বাড়িটিই কলেজের জন্য বরাদ্দ। এখন ঐ বাড়ির বিভিন্ন কক্ষ কলেজের নানা কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে কলেজ আরও স্বচ্ছল হলে ওইসব কক্ষও ভাঙা পড়বে। আর যে কক্ষটি এরই মাঝে ভাঙা পড়ছে সেটির অবস্থা জরাজীর্ণ ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ২২০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
এসএস/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।