তাই কোনো সান্ত্বনার বাণী আর কান্না থামাতে পারছে না স্বজনহারা এই পরিবারের। হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনায় বিয়েবাড়িতে শুরু হয়েছে শোকের মাতম।
আব্দুস সালাম রাজশাহীর বাঘা উপজেলার সরের হাট উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক। কান্নাজাড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, দুই মেয়ে ও এক ছেলে তার। বড় মেয়ে জান্নাতুন্নেসার বিয়ে হয়ে গেছে, বাকি শুধু ছোটমেয়ে মাহবুবা আক্তার রেশমী। আগামী শুক্রবার তার বিয়ের দিন ধার্য রয়েছে। ছোটবোনের বিয়ের জন্যই কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিলেন মেজবাহ উদ্দিন মাসুদ। কিন্তু পুত্রবধূ রুনা বেগম বেড়াতে গিয়েছিলেন তার মায়ের বাড়ি। তাই বিয়ের দাওয়াত দেওয়ার জন্য মাকে সঙ্গে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যান মাসুদ।
দাওয়াত দিয়ে স্ত্রী-সন্তান ও মাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলে খবর আসে, কেউ আর জীবিত বাড়ি ফিরবে না। সবাই চলে গেছে না ফেরার দেশে। অনাকাঙ্ক্ষিত এমন ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন পরিবারের সবাই।
বিয়েবাড়িতে প্রিয় চারটি মানুষের মরদেহ যখন আনা হবে, তখন বাকিদের গগনবিদারী কান্না আর থামানো যাবে না বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন শোকাহত আব্দুস সালাম।
এদিকে, নিহত একই পরিবারের চারজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কথা রয়েছে।
এর আগে, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় ট্রাক-সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে একই পরিবারের চারজনসহ পাঁচজন নিহত হন। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের ভেড়ামারা পারহাউজ যাত্রী ছাউনির সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন সিএনজিচালক রাজশাহীর বাঘা উপজেলার সরের ঘাট এলাকার দবির মোল্লার ছেলে জালাল উদ্দিন (৩২), একই এলাকার মেজবাহ উদ্দিন মাসুদ (৩২), তার স্ত্রী রুনা খাতুন (২৬), ছেলে ঈব্রাহীম হোসেন রোজদি (৭ মাস) ও মেজবাহ উদ্দিনের মা মাহমুদা বেগম (৫৪)।
ভেড়ামারা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আসাদ বাংলানিউজকে জানান, মেজবাহ উদ্দিন মাসুদ তার পরিবার নিয়ে ঝিনাইদহ থেকে অটোরিকশায় করে রাজশাহী ফিরছিলেন। পথিমধ্যে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের ভেড়ামারা পারহাউজ যাত্রী ছাউনির সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে দ্রুতগামী একটি ট্রাক অটোরিকশাটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই অটোরিকশাচালক জালাল উদ্দিন ও রুনা খাতুনের মৃত্যু হয়। এসময় রুনার স্বামী মাসুদ, ছেলে রোজদি ও শাশুড়ি মাহমুদা বেগম গুরুতর আহত হন। পরে আহতদের ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রোজদিকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত দ ‘জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে নেওয়ার পরপরই জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাসুদকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে চিকিৎসাধীন তার মা মাহমুদারও মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন> ভেড়ামারায় একই পরিবারের ৪ জনসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫
বাংলাদেশ সময়: ০৭০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৯
এসএস/একে