মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত ‘প্রো-অ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল-এ এ ঘটনা ঘটে। সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীনগর সোনামিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা ইসান খান নিহত কন্যাশিশুটির বাবা।
শিশুটির বাবা ইসান খান জানান, গত ১২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়ায় ‘কেয়ার হাসপাতাল’-এ তার স্ত্রী সিজারের মাধ্যমে একটি মেয়ের জন্ম দেন। প্রসবের পর থেকেই শিশুটির খাদ্যনালীতে সমস্যা ছিল। তাই কেয়ারের চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে মেয়েকে ওইদিন সন্ধ্যায় সাইনবোর্ডের প্রো-এ্যাকটিভ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটির নানা পরীক্ষার পর জানায়, তার অবস্থা খুবই খারাপ ও আশঙ্কাজনক। তার অবস্থা খারাপ জেনেই বাবা হিসেবে শেষ চেষ্টা হিসেবে খাদ্যনালীতে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেদিনই সফলভাবে তার অপারেশন শেষ হয়। পরে অক্সিজেন দিয়ে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়।
‘মঙ্গলবার দুপুরেও আমার বাবুর শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল। প্রতিদিনই ডাক্তার তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর দিতেন। দুপুরে তাকে দেখে বাসায় যাওয়ার পর সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল থেকে আমাকে ফোন করে বলা হয় যে, আমার বাচ্চার অবস্থা খুবই খারাপ। পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখি আইসিইউ কক্ষের সব মেশিন বন্ধ, আমার বাচ্চার কোনো পাল্স নেই। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, আমার বাচ্চা মারা গেছে। ’
শিশু মৃত্যুর জন্য নার্সদের অভিযুক্ত করে ইসান খান জানান, প্রো-এ্যাকটিভ হাসপাতালের সেবার মান খুবই খারাপ। নার্সদের আচরণ ভালো নয়। তাদের অবহেলার কারণে আমার বাচ্চাটা মারা গেছে। আমি চাই আর কোনো বাবা যেন এ হাসপাতালে গিয়ে তার সন্তান না হারায়। তিনি প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার দাবি করেন।
শিশুটির মামা সাফায়েত জানান, নার্সদের অবহেলার কারণেই আমাদের বাচ্চাটার মৃত্যু হয়েছে। তারা রোগীদের কোনো গুরুত্বই দেয় না। এখানে সেবার মান শূন্য। তারা রোগীদের ফুসলিয়ে ভর্তি করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।
এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নার্সদের অবহেলায় নবজাতক মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, যথাযথ নিয়মেই ওই শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অপারেশনের আগেই শিশুটির জীবন সংকটাপন্ন ছিল। সে কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালটির ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, আমরা শতভাগ আন্তরিকভাবে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে তার অবস্থা এমনিতেই খুবই আশঙ্কাজনক ছিল। অপারেশনের আগেই শিশুটির বাঁচার সম্ভাবনা ছিল ক্ষীণ।
তিনি আরো বলেন, অপারেশনের আগে শিশুটির অভিভাবকের সঙ্গে চিকিৎসকদের কথা হয়। শিশুটির যে অবস্থা ছিল তাতে অপারেশন করলে বাঁচতেও পারে আবার মারাও যেতে পারে, সেটি তাদের জানানো হয়েছিল। আল্লাহর ভরসায় আর তাদের কথার ওপর নির্ভর করে আমরা অপারেশন করেছি। এখানে আমাদের কোনো ভুল-ত্রুটি বা অবহেলা ছিল না।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৯
এমআরপি/এইচজে