১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয় লগ্নে ৯ ডিসেম্বর সকালে তারা শহীদ হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে শহীদ পরিবারের লোকদের খোঁজ-খবর নেওয়া ও আর্থিক সহযোগিতা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
সম্প্রতি ওই এলাকা ঘুরে শহীদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্যই জানা গেছে।
আহম্মদ নগরের পাটওয়ারী বাড়িতে একসঙ্গে নয়জনের গণকবর রয়েছে। যুদ্ধের সময় ওই বাড়ির ১১ জন শহীদ হন। বাকি দুইজনকে অন্য গ্রামে সমাহিত করা হয়। পাশেই আরেকটি গণকবরে সমাহিত হন বেশ কয়েকজন। এভাবে দুই গ্রামে ৩২ জন শহীদকে সমাহিত করা হয় ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর।
ওই এলাকাতেই থাকেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ৮ ডিসেম্বর যখন বিজয়ের খবর আসছিল, তখন মুক্তিযোদ্ধারা অনেক স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন। ওইদিনই বিকেলে কুমিল্লার লাকসাম এলাকা থেকে পাক-বাহিনীর সদস্য এবং স্থানীয় ও আগত রাজাকাররা খিলাবাজার এলাকায় কাইথরা গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে অবস্থান নেয়। রাতে তারা বাড়ির লোকদের বের করে দিয়ে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানেও টের পায় পাক-বাহিনী। পরদিন সকালে তারা যখন ওইসব বাড়ি থেকে বের হয়ে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ের সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখন তাদর লক্ষ্য করে মুক্তিযোদ্ধারা ৩ থেকে ৪ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। গুলি খেয়ে পাক-বাহিনীর একজন সদস্য লুটিয়ে পড়ে। এরপরই তারা অবস্থানরত বাড়িগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে এবং বাড়ির লোকদের গুলি করে হত্যা করে। তাদের গুলিতে ৩২ জন শহীদ হন এবং প্রায় ৫০ জন গুরুতর আহত হন।
তিনি আরও বলেন, পাকবাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ধীরে ধীরে ডাকাতিয়া নদী পার হয়ে দক্ষিণ থেকে সড়ক দিয়ে না গিয়ে ফসলি জমি দিয়ে হেঁটে চলে যায়। পরে আমরা গুলিতে শহীদ নারী, পুরুষ ও শিশুদের সমাহিত করার ব্যবস্থা করি। আর ৩ জন হিন্দু ধর্মের শহীদকে আলাদা দাহ করা হয়।
আহম্মদ নগরের পাটওয়ারী বাড়ির শহীদ পরিবারের সন্তান কোরবান আলী বাংলানিউজকে বলেন, একাত্তরে আমিও গুলিবিদ্ধ হয়েছি। যার চিহ্ন এখনো রয়েছে। আমাদের পরিবারসহ বাড়ির ১১ জন শহীদ হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পরে বঙ্গবন্ধু আমাদের আর্থিক সহায়তা দিলেও দীর্ঘ ৪৮ বছর কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের কাছে আবেদন, শহীদদের গণকবরগুলো যেন সংরক্ষণ করা হয়।
একই বাড়ির আরেক শহীদ পরিবারের সন্তান আবুল খায়ের পাটওয়ারী বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান সরকার শহীদ পরিবারগুলোকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিলেও আমরা সবকিছু থেকে বঞ্চিত। আমাদের দু’টি গ্রামে এত বড় ধরনের গণহত্যা হলেও কবরগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি। আমাদের প্রজন্মের পরে শহীদদের কোনো চিহ্ন থাকবে না। তাই সরকারের কাছে আবেদন শহীদদের স্মৃতি যেন সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
শাহরাস্তি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে ২০১৮ সালে ‘অপরাজেয় শাহরাস্তি’ নামে মহান স্বাধীনতা দিবসে একটি স্মরণিকা বের হয়। ওই স্মরণিকায় ৯ ডিসেম্বরে শাহরাস্তি খিলাবাজারে আক্রমণের তথ্যগুলো তুলে ধরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান।
ওই স্মরণিকায় উল্লেখ করা হয় ৩২ শহীদের নাম। তারা হচ্ছেন- শহীদ মুজাফফর আলী, রুপজান বিবি, রফিকুল ইসলাম (১), রফিকুল ইসলাম (২), খুকি, নাজিম আলী, আব্দুল গণি, হরিমহন পাল, ক্ষীরোদ চন্দ্র পাল, মহেশ চন্দ্র পাল। এরা সবাই প্রসন্নপুর গ্রামের বাসিন্দা।
কইথরা (আহম্মদ নগর) গ্রামের শহীদরা হলেন, শহীদ হাছান আহম্মদ মিয়া, আব্দুস সাত্তার, কালা মিয়া, রমজান আলী, রঞ্জন বানু, আবু তাহের, নুরুল ইসলাম, আব্দুল মাজিদ, মো. জাকির হোসেন, হাসান মিয়া, শাফিয়া বেগম, ওসমান আলী, খুরশিদা বেগম, মোহাম্মদ আলী, আসমতের নেছা, টুকু কাজী, রাবিয়া বেগম, রওশনারা বেগম, মোশাররফ হোসেন, রাবিয়া বেগম, কুলসুম বেগম। নওগাঁও গ্রামের একজন শহীদ। তিনি হলেন-শহীদ আবুল বাশার।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯
এসএ/