ইন্ডিয়ান (এলএইচবি) র্যাকসহ বাড়তি এ সুবিধা নিয়ে বনলতা এক্সপ্রেস তার নতুন পথচলা শুরু করতে যাচ্ছে ২৮ ডিসেম্বর। তাই ওই দিন সকাল ৭টায় আরও একটি মাইলফলক ছুঁতে যাচ্ছে বিরতিহীন ট্রেন ‘বনলতা এক্সপ্রেস’।
ফলে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ইন্দোনেশিয়ান (ইনকা) র্যাকের (ট্রেনের সব কোচ মিলে একটি র্যাক) ছিল শেষ যাত্রা। এরপর শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) ট্রেনটির সাপ্তাহিক বন্ধের দিন সকালে ইনকা র্যাকটি চলে যাবে পার্বতীপুরে। আর নীলফামারী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী ‘নীল সাগর’ এক্সপ্রেসের এলএইচবি র্যাকটি চলে আসবে রাজশাহীতে। যাত্রীদের যাতে কোনো দুর্ভোগ সৃষ্টি না হয় সে বিষয়টি রাখা হচ্ছে মাথায়। আর তাই বনলতার কোচ অদল বদলের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ট্রেনটির সাপ্তাহিক বন্ধের দিন শুক্রবার। সব কিছু ঠিক থাকলে শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) থেকে এলএইচবি র্যাক নিয়ে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে রাজশাহী-ঢাকা রুটের বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন বনলতা এক্সপ্রেস।
এই র্যাক পরিবর্তনের কারণেই আগাম টিকিট বিক্রি বন্ধ ছিল বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের। তবে গত ২২ ডিসেম্বর থেকে আবারও আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয় বনলতা এক্সপ্রেসের। মূলত ২২ ডিসেম্বরই টিকিট বিক্রি করা হয় ২৮ ডিসেম্বরের। র্যাক পরিবর্তনের কারণে নতুন করে আসনবিন্যাস ঘটেছে বনলতায়। গত ২২ ডিসেম্বর যারা আগাম টিকিট কেটেছেন তাদের অনেকেই প্রথমবারের মত বনলতায় এসি কেবিন পেয়েছেন। যে সুবিধাটি এর আগে ছিলনা।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজশাহী-ঢাকা রুটে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় এখন নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সিডিউল বিপর্যয় রোধে বনলতার কোচ বা র্যাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। বনলতায় থাকা ইন্দোনেশিয়ান র্যাকটি কোনোভাবেই সিল্কসিটি, পদ্মা ও ধূমকেতুর সঙ্গে খাপ খাচ্ছিল না। কারণ বনলতার ওই র্যাকটি সব দিক থেকেই ছিল এগুলোর চেয়ে ভিন্ন। ফলে ঢাকা থেকে রাজশাহী হয়ে ইন্দোনেশিয়ান র্যাকটি চাঁপাইনবাবগঞ্জে গিয়ে প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষামান থাকতো। পরদিন ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে আবার সেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়তো। অথচ র্যাকটি অন্যগুলোর মত হলে এই সময়ে কোনো একটি ট্রেনের সিডিউল ব্রেক হলে সেসময় এই র্যাকটি দিয়ে চালানো যেত। এছাড়া প্রয়োজনে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন শুক্রবারও এই র্যাকটি কাজে লাগানো যেত।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক আব্দুল করিম জানান, ২৮ ডিসেম্বর থেকে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে বনলতা এক্সপ্রেস। এর আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। আগে বনলতা এক্সপ্রেসে ইন্দোনেশিয়ান র্যাক সংযুক্ত করা হয়েছিল। ২৮ ডিসেম্বর থেকে চলাচল শুরু হতে যাচ্ছে ইন্ডিয়ান র্যাকের। এই র্যাকটিতে আরও দুইটি এসি কোচ সংযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে থাকছে দুইটি এসি কেবিন ও দুইটি এসি চেয়ারকোচ। আগে বনলতায় এসি কেবিন ছিল না। দুইটি এসি চেয়ারকোচ ছিল, বাকিগুলো নন এসি। এর ফলে আগামী ২৮ ডিসেম্বর থেকে বাড়তি সুবিধা পেতে যাচ্ছেন রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বনলতা এক্সপ্রেসের ইন্দোনেশিয়ান কোচের র্যাকটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে তার আট মাসের যাত্রা শেষ করবে। এরপরে ট্রেনটি শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সাপ্তাহিক বন্ধের দিন সকালে পাঠানো হবে পার্বতীপুরে। সেখান থেকে নীলসাগর এক্সপ্রেসে থাকা ইন্ডিয়ান র্যাকটি আনা হবে রাজশাহীতে। ওই র্যাকটি দিয়েই আগামী ২৮ ডিসেম্বর থেকে নতুন যাত্রা শুরু করবে বনলতা এক্সপ্রেস।
এদিকে, বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন বনলতায় ইন্ডিয়ান র্যাকটি সংযোজন হলে অনেক সুবিধা বাড়বে বলে জানিয়েছেন- পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (ডিসিসিএম) ফুয়াদ হোসেন আনন্দ। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে একই কম্পোজিশনের ট্রেন হবে রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী বনলতা, সিল্কসিটি, পদ্মা ও ধূমকেতুর। এতে একদিক দিয়ে যেমন শিডিউল বিপর্যয় রোধ করা যাবে তেমনি আসন সংখ্যা বাড়বে। এর ওপর এসি কেবিন ও এসি চেয়ার বাড়ায় যাত্রীরা পাবেন বাড়তি সুবিধা। এতদিন বনলতার যাত্রীরা ইন্দোনেশিয়ান র্যাকে এসি কেবিনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এরমধ্যে দিয়ে সেই দাবি পূরণ হবে বলেও উল্লেখ করেন এ কর্মকর্তা।
একই কথা জানিয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (সিওপিএস) শহীদুল ইসলাম বলেন, বনলতার র্যাক পরিবর্তনের কারণে এখন ২০১টি আসন বাড়বে। এছাড়া আরও বড় সুবিধা হচ্ছে এই র্যাকটিতে দুটি এসি কোচও যুক্ত হবে। বনলতার ইন্দোনেশিয়ান কোচে ছিল মাত্র দুটি এসি চেয়ারকোচ। কিন্তু এখন আরও দুটি এসি কোচ থাকবে। নন এসিতে প্রতিটি কোচে আসনসংখ্যা ছিল ৯২টি, এখন থাকবে ১০৫টি করে। এছাড়া এসি কেবিনের ৯৬টি আসনসহ সবমিলিয়ে ২০১টি আসন বাড়বে বনলতার বর্তমান ইন্ডিয়ান র্যাকটিতে। আর ইন্ডিয়ান র্যাক দিয়ে এতদিন থেকে রাজশাহী-ঢাকা রুটে সিল্কসিটি, পদ্মা ও ধূমকেতু চলাচল করছে। কোনো যাত্রীর কোনো অভিযোগ নেই। তাহলে বনলতা চালালে সমস্যা কোথায়, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
এর পরও এটিই যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তা নয়। ইন্ডিয়ান র্যাকটি দিয়ে পাইলটিং হিসেবে বনলতার নতুন পথচলা শুরু করা হবে। এর পরে যদি এতে কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আবারও নতুনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ বরাবরই যাত্রীসেবার মাণ বৃদ্ধি ও রেলযাত্রীদের নিরাপদ এবং আরামদায়ক ভ্রমণের বিষয়টিই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। যোগ করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (সিওপিএস) শহীদুল ইসলাম।
এর আগে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনের বর্তমান ইন্দোনেশিয়ান র্যাকটি পরিবর্তনের খবর গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী বনলতার ইন্দোনেশিয়ান র্যাকটি পরিবর্তন না করার জন্য রেলমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। পরে বনলতা এক্সপ্রেসে ইন্ডিয়ান র্যাক যুক্ত হলে কী কী সুবিধা বাড়বে সেই বিষয়গুলো প্রতিমন্ত্রীকে বোঝানো হয়। বিষয়টি প্রতিমন্ত্রী বুঝতে পারেন। ফলে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি বিবেচনায় র্যাক পরিবর্তন নিয়ে জটিলতার অবসান ঘটে। এর মধ্য দিয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে রাজশাহী-ঢাকা রুটে ইন্ডিয়ান র্যাক দিয়ে বনলতা এক্সপ্রেস পরিচালনা করতে যাচ্ছে। খোদ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ২৫ এপ্রিল রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচল শুরু করে বনলতা এক্সপ্রেস। এ রুটে এটিই প্রথম বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন। গত ১৭ জুলাই থেকে ট্রেনটির চলাচল চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। ৭৯১ আপ ও ৭৯২ ডাউন বনলতা বিরতিহীন এক্সপ্রেস ট্রেনটি পরিচালনা করা হয় একটি র্যাকের সাহায্যে। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বনলতা আপ-৭৯১ ট্রেনটি ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছেড়ে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে ঢাকার কমলাপুরে পৌঁছায়। ট্রেনটি ডাউন ৭৯২ হয়ে বেলা ১টা ৩০ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে সন্ধ্যা ৭টা ১০মিনিটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌঁছে। গোলোযোগ না থাকলে ৩৪৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রমে ট্রেনটির সময় লাগে ৪ ঘণ্টা ৪০ মিনিট।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯
এসএস/এসএইচ