ইলিশের পোনা বা বাচ্চা অর্থাৎ জাটকা ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্য নিয়ে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও, এ সময়টাতে নদ-নদীতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ডিম ছাড়ার কারণে নিষেধাজ্ঞাটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে বলে জানিয়েছেন মৎস্য বিভাগ।
আর তাই অভয়াশ্রমে মাছ শিকার থেকে বিরত রাখার জন্য এ সময়টাতে নির্ধারিত জেলেদের পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (হিলসা) ড. বিমল চন্দ্র দাস।
তিনি জানান, জাটকা (৯ ইঞ্চির কম সাইজ) পূর্ণাঙ্গ ইলিশে পরিণত হওয়া নিশ্চিত করতে মৎস্য অধিদপ্তর প্রতি বছর দুই মাস নির্দিষ্ট ৬টি অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। মার্চ ও এপ্রিল মাসে (বাংলা মাসের ক্ষেত্রে চৈত্র ও বৈশাখ) পোমা-রামসোসসহ নদ-নদীতে থাকা বিভিন্ন মাছ ডিম ছাড়ে। তাই সব মিলিয়ে এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাছের জন্য।
তিনি আরও জানান, ৬টি অভয়াশ্রমের মধ্যে গত ১ নভেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আন্ধারমানিক নদের ৪০ কিলোমিটারে ২ মাসের নিষেধাজ্ঞা পালিত হয়েছে। অপর ৫টি অভয়াশ্রমে রোববার (০১ মার্চ) থেকে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে।
যারমধ্যে বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা সংলগ্ন মেঘনার শাখা-প্রশাখা নিয়ে গঠিত ষষ্ঠ অভায়াশ্রমে গত বছর থেকে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা এ অভয়াশ্রম বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর নদীর হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দিগঞ্জের বামনীরচর পয়েন্ট পর্যন্ত ১৩ দশমিক ১৪ কিলোমিটার, মেহেন্দিগঞ্জের গজারিয়া নদীর হাটপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার, হিজলার মেঘনার মৌলভীরহাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দিগঞ্জ সংলগ্ল মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার।
এছাড়া চলতি নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা অপর ৪টি অভয়াশ্রম হলো- চর ইলিশার মদনপুর থেকে ভোলার চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর শাহাবাজপুর চ্যানেলের ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী জেলার চর রুস্তুম পর্যন্ত তেতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার এবং শরীয়তপুরের নরিয়া থেকে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত নিম্ন পদ্মার ২০ কিলোমিটার নদ-নদী।
মৎস্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আজিজুল হক বলেন, অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য হলো জাটকা রক্ষা করে বড় ইলিশে পরিণত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অন্য মাছ আহরণের অজুহাতে জেলেরা নদীতে নেমে যেন জাটকা নিধন করার সুযোগ না পায়, সেজন্য অভয়াশ্রম জলসীমার মধ্যে সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে আগে থেকেই জেলে পাড়াগুলোতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। এখন প্রতিরোধে চালানো হচ্ছে অভিযান। আর প্রণোদনা হিসাবে তালিকাভূক্ত জেলে পরিবারগুলোকে এই সময়ে ৪০ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০২০
এমএস/এইচএডি/