ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

কদর নেই হুক্কা কারিগরদের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২০
কদর নেই হুক্কা কারিগরদের

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ষাটোর্ধ্ব লাহু মিয়া একজন হুক্কা তৈরির কারিগর। বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ৪০ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। কিন্তু আগের মত হুক্কার তেমন একটা চাহিদা নেই বলে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনো রকমে টিকে আছেন। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়া এলাকার বাসিন্দা লাহু প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি যন্ত্রপাতি নিয়ে শহরের সড়ক বাজারের হুক্কা পট্টিতে বসেন। একসময় ১২-১৫ জন হুক্কা কারিগর এই পট্টিতে পসরা নিয়ে বসলেও এখন কেবল লাহু’র ছোট ভাই নান্নু ছাড়া আর কেউ দোকান সাজান না।

লাহু মিয়া ও নান্নু মিয়া বাংলানিউজকে জানান, আধুনিক যুগে বাজারে বিভিন্ন ধরনের সিগারেটের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় হুক্কার ব্যবহার কমে গেছে।  

সরেজমিন হুক্কা পট্টিতে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের সরু গলির মাথায় দুই ভাই দুই দিকে বসে হুক্কা তৈরি ও বিক্রি করছেন। আধা ঘণ্টারও বেশি সময় অবস্থান করে তাদের কাছে কোনো বিক্রেতাকে আসতে দেখা যায়নি।  

কদর নেই হুক্কা কারিগরদের

লাহু মিয়া বলেন, এক সময় এই স্থানে বসে ১২/১৫ জন মিলে হুক্কা তৈরি ও বিক্রি করতেন। দিন দিন এর চাহিদা কমে যাওয়ায় বাকিরা এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন।

হুক্কা তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে আমরা নারিকেলের ভেতরের অংশটি পরিষ্কার করে রোদে শুকাই। এরপর ধারালো দা দিয়ে নারিকেলের খোলের বাইরের পুরো ছোবড়া (আঁশ) চেঁছে নেই। তারপর খোলটাকে কালো রঙ দেওয়ার পর রোদে শুকাই। এরপর এতে ছিদ্র করে কাঠের হাতল লাগাই। এভাবেই পুরো একটি হুক্কা তৈরি করি।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, এখন আর আগের মতো বিক্রি হয় না বলে খুব কষ্টে আছি। প্রতিদিন ডজনেরও বেশি হুক্কা তৈরি করতে পারলেও দুয়েকটাও বিক্রি করতে পারি না। প্রতিটি হুক্কা দেড়শ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকা হলেও বিক্রি করি ১০০ টাকায়। এই আয় দিয়ে পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হয়।  

লাহু মিয়ার পসরার ঠিক বিপরীত দিকে বসেন তার ছোট ভাই নান্নু মিয়া। তিনি বলেন, এই পেশার সঙ্গে জড়িত থাকায় অন্য কোনো কাজ শিখিনি। এখন বয়স হয়ে গেছে। সংসার তো চালাতে হবে তাই কষ্ট হলেও এই কাজই করে যাচ্ছি। আমাদের হুক্কা মূলত গ্রাম-গঞ্জের বৃদ্ধ লোকজনই বেশি কিনে থাকে। সিগারেটের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এখন আর কেউ হুক্কা কিনে না।  

তবে হুক্কায় তামাক ব্যবহার ছাড়াও এখন অনেক ঘরের শোপিচ হিসেবে এটিকে ব্যবহার করে থাকে। এজন্য অনেক তরুণ-তরুণী বা পরিবারের লোকজন এ হুক্কা কিনতে আসে মাঝে মধ্যে।  
 
হুক্কা কিনতে আসা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের হালিমা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমার বৃদ্ধা মায়ের জন্য একটা হুক্কা কিনেছি। পুরনো অভ্যাসের কারণে তিনি হুক্কা দিয়ে তামাক ব্যবহার করেন।  

শহরের মেড্ডা এলাকার বাসিন্দা ইদ্রিস মিয়া বলেন, তরুণ বয়স থেকে এই হুক্কা দিয়ে তামাক ব্যবহার করে আসছি। শরীরের ক্ষতি হলেও এটি ছাড়তে পারি না।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০২০
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।