বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
একইসঙ্গে ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় খুলনা, বরিশাল ও গোপালগঞ্জ সড়ক জোনে নির্মিত ২৫টি সেতু এবং তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণ (সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় কর্ণফুলী (শাহ আমানত সেতু) সেতুর ছয়লেন বিশিষ্ট আট কিলোমিটার এপ্রোচ সড়কও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটি প্রথম অ্যাক্সেস কন্ট্রোল্ড ননস্টপ এক্সপ্রেসওয়ে। এ এক্সপ্রেসওয়েতে কোনো ট্রাফিক ক্রসিং নেই। যানবাহনগুলো বিরতিহীনভাবে চলবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার খুব ইচ্ছে ছিল নিজে গিয়ে উদ্বোধন করার। কিন্তু পারলাম না। আজকে এখান থেকে এক্সপ্রেসওয়েটিসহ অনেকগুলো উন্নয়ন কাজ আমরা উদ্বোধন করছি। তবে খুব শিগগির যাব। এক মাসের মধ্যেই হয়তো যেতে পারি।
এক্সপ্রেসওয়েটি দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগে আমূল পরিবর্তন এনেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সবসময় অবহেলিত ছিল। দীর্ঘ ভোগান্তি নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যেতে হতো। এ সড়ক দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এখন দ্রুত ও সহজে যাতায়াত করতে পারবে। আমিও তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে পারব।
২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তার সরকার দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছি। এটি দেশ ও জনগণের আরও উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করছে।
পরে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জেলার উপকার ভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের সড়ক যোগাযোগে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে, দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন তার একটা উদাহরণ।
কাদের বলেন, ইউরোপে অনেক দৃষ্টিনন্দন সড়ক দেখা যায়। আমাদের এ এক্সপ্রেসওয়েটিও ইউরোপের সড়কগুলোর মতো দৃষ্টিনন্দন সড়ক। এই সড়ক ইউরোপের অনেক সড়ককে হার মানাবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে মাত্র ৩০ মিনিটে ঢাকা থেকে মাওয়া পৌঁছা যাবে। পদ্মাসেতু নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে গেলে মাত্র ৪৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা যাওয়া যাবে।
এই এক্সপ্রেসওয়েটি এশিয়ান হাইওয়ের করিডোর-১ এর অংশ হবে। আটলেনের এক্সপ্রেসওয়েটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন-এসডব্লিউও (পশ্চিম)। সেনাবাহিনীর এসডব্লিউও-এর তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সম্পন্ন হয় দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ের কাজ।
এদিকে, পদ্মাসেতুর কাজও এখন শেষপর্যায়ে। স্বপ্নের এ সেতু উদ্বোধনের আগেই খুলে দেওয়া হচ্ছে দেশের প্রথম এই এক্সপ্রেসওয়ে। আগে এই সড়ক পাড়ি দিতে সময় লাগতো প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বা তারও বেশি। কিন্তু পদ্মাসেতু খুলে দেওয়ার পর ৪৫-৫০ মিনিটেই পুরো সড়ক পাড়ি দেওয়া সম্ভব হবে।
আগে শুধু পোস্তাগোলা রেলক্রসিং পার হতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা জ্যামে বসে থাকতে হতো। এক্সপ্রেসওয়ে হওয়ার কারণে এখন এই জায়গাটুকু পার হতে সময় লাগে কয়েক সেকেন্ড।
প্রধানমন্ত্রী এক্সপ্রেসওয়েটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশেষ করে ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, শরীয়তপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, খুলনা জেলাসহ আশপাশের সব জেলার সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগে নিরাপদ ও আরামদায়ক করে দিলেন।
এর আগে এক্সপ্রেসওয়েটি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দৃষ্টিনন্দন এবং আধুনিক ট্রাফিক ডিজাইন সমন্বিত এ এক্সপ্রেসওয়ে উন্নত বিশ্বের সড়কের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্মিত। সার্ভিস লেনের দু’পাশে সবুজায়নের জন্য বনায়ন করা হয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকার সড়কের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে এবং উন্নত হচ্ছে, তা এ সড়ক দেখলেই বোঝা যায়।
এক্সপ্রেসওয়ের দুই পাশে দুইলেন করে পৃথক সড়ক রয়েছে। যাতে ধীরগতির যানবাহন চলাচল করতে পারে। নির্দিষ্ট কয়েকটি পয়েন্ট ছাড়া এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা এবং এক্সপ্রেসওয়েতে নামাও যাবে না। এক্সপ্রেসওয়েতে কোনো ট্রাফিক ক্রসিংও নেই।
এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচটি ফ্লাইওভারের মধ্যে একটি ২ দশমিক ৩ কিলোমিটার, কদমতলী-বাবু বাজার লিংক রোড ফ্লাইওভার। অন্য চারটি ফ্লাইওভার হলো আবদুল্লাহপুর, শ্রীনগর, পুলিয়াবাজার এবং মালিগ্রামে। ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়েতে জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে চারটি রেলওয়ে ওভার ব্রিজ ছাড়াও রয়েছে চারটি বড় সেতু।
এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে দুটি প্যাকেজে। প্রথম প্যাকেজে যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয় প্যাকেজে শরীয়তপুরের পাচ্চর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার।
এই সড়কে সেতু রয়েছে ৩১টি। এগুলোর মধ্যে পিসি গার্ডারের সেতু ২০টি ও আরসিসির ১১টি। এছাড়া ধলেশ্বরী-১ ও ধলেশ্বরী-২ এবং আড়িয়াল খাঁ নদীর ওপর তিনটি বড় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বাইরে ৪৫টি কালভার্ট, আবদুল্লাহপুর, হাঁসারা, শ্রীনগর, কদমতলী, পুলিয়া বাজার ও সদরপুরে থাকছে ছয়টি ফ্লাইওভার। জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে থাকছে চারটি রেলওয়ে ওভারপাস। গ্রেট সেপারেটর হিসেবে ১৫টি আন্ডারপাস ও তিনটি ইন্টারচেঞ্জ রয়েছে। এগুলো রয়েছে যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া এবং ভাঙ্গায়।
গণভবন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
এসময় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম প্রকল্প বিষয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন তথ্য চিত্র তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন>> দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে, ৫ ঘণ্টার রাস্তা ৫৫ মিনিটেই!
বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০২০/আপডেট: ১৪১৪ ঘণ্টা
এমইউএম/টিএ