১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে বক্তাবলীর গণহত্যায় শহীদ হয়েছিলেন ১৩৯ জন নিরীহ মানুষ।
এ ১৩৯ শহীদের একজনের স্বজন মো. আলী হোসেন (৫২)।
তিনি জানান, স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতি শহীদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। এছাড়া শহীদদের প্রতি পরিবারকে দু’হাজার টাকা ও আহতদের পাঁচশ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন।
আলী হোসেন বলেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর পর আর কেউই আমাদের খোঁজ নেননি। তাই শহীদ পরিবার হিসেবেও আমরা স্বীকৃতি পাইনি।
বঙ্গবন্ধু সেই চিঠিতে লিখেছিলেন-
‘প্রিয় ভাই/বোন,
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আপনার সুযোগ্য পুত্র/পিতা/স্বামী/মা/স্ত্রী আত্মোৎসর্গ করেছেন। আপনাকে আমি গভীর দুঃখের সাথে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক সমবেদনা। আপনার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতিও রইল আমার প্রাণঢালা সহানুভূতি। এমন নিঃস্বার্থ মহান দেশপ্রেমিকের পিতা/পুত্র/স্বামী/স্ত্রী হওয়ার গৌরব লাভ করে সত্যি আপনি ধন্য হয়েছেন। ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল’ থেকে আপনার পরিবারের সাহায্যার্থে আপনার সংশ্লিষ্ট মহাকুমা প্রশাসকের নিকট ২ হাজার টাকার চেক প্রেরিত হল। চেক নম্বর সিএ ০০৫১৬। আমার প্রাণভরা ভালবাসা ও শুভেচ্ছা নিন।
ইতি-শেখ মুজিব। ’
২৯ নভেম্বরের ঘটনার দিন প্রসঙ্গে তৎকালীন ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা তমিজউদ্দিন রিজভী সেদিনের কথা মনে করে জানান, তারা মুজিব বাহিনীর অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষ করে বক্তাবলী ও এর আশপাশ গ্রামে অবস্থান নেন। ওই সময়ে বক্তাবলী গ্রামে এক থেকে দেড়শ মুক্তিযোদ্ধা ছিল। নদীবেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় এলাকাটিকে নিরাপদ মনে করতেন মুক্তিযোদ্ধারা। বক্তাবলীতে অবস্থান করেই মূলত মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অপারেশন করার পরিকল্পনা করতেন।
তিনি জানান, ঘটনার দিন তথা ২৯ নভেম্বর ছিল প্রচণ্ন্ড শীত । সকাল থেকেই ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল পুরো এলাকা। ভোরের দিকে হঠাৎ করেই পাক বাহিনী গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে। অপ্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা জবাব দেন। উভয়পক্ষের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ চলার সময় মুন্সিগঞ্জ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ব্যাটালিয়ন বক্তাবলীতে এসে এখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিলে তাদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। পরে তারা একত্রে পাক বাহিনীর সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টা একটানা যুদ্ধ চালান। এসময় মুক্তিযোদ্ধারা মোক্তারকান্দি কবরস্থানের সামনে কয়েকজন রাজাকারকে ধরে হত্যা করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের উপুর্যপরি আক্রমনের মুখে পাকিস্তানি হানাদাররা পিছু হটতে শুরু করে। এ সময় রাজাকার, আল বদর, শামস বাহিনীর পরামর্শে তারা ১৩৯ জন নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে ধরে এনে লাইন ধরিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। এতে নিহত হয় শাহিদ, ফারুক, অহিদ, মনির, শাহ আলম, রহমতউল্যাহ, শামসুল, আলম, সালামত, খন্দকার, সুফিয়া, আম্বিয়া, খোদেজা সহ ১৩৯ জন। পিছু হটার সময় হানাদার বাহিনী পেট্রোল ও গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী পার সংলগ্ন বক্তাবলী পরগনার, রাজাপুর ডিগ্রীর চর, মুক্তাকান্দি, গঙ্গানগর, রাম নগর, গোপাল নগর, রাধানগর সহ ২২টি গ্রাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২০
এবি