ঢাকা, শনিবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

করোনার প্রভাবে পোষা প্রাণী-পাখির ‘ব্যবসায় মন্দা’

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৯ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২০
করোনার প্রভাবে পোষা প্রাণী-পাখির ‘ব্যবসায় মন্দা’

ঢাকা: শখ করে অনেকেই ঘরে অনেক ধরনের প্রাণী-পাখি পুষে থাকেন। এরা যেমন সময় কাটানোর বেশ ভালো একটি মাধ্যম, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে উপকারিও বটে। এখন বাচ্চারাও ঘরে পোষা প্রাণী বেশ পছন্দ করে খেলার সঙ্গী হিসেবে।

পোষা প্রাণী হিসেবে কুকুর, বিড়াল, খরগোশ, ময়না ও টিয়া পাখি বেশি জনপ্রিয় আমাদের দেশে। তবে এর সঙ্গে অনেকেই আজকাল হ্যামস্টার, গিনিপিগ পুষতে পছন্দ করেন।

সঙ্গে আরও শত প্রজাতির পাখি তো আছেই। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এবার ব্যবসায়ীকভাবে ধস নামতে শুরু করেছে এই খাতটিতে।

শনিবার (২১ মার্চ) রাজধানীতে পশু-পাখির সবচেয়ে বড় বাজার কাটাবন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, দিনের অধিকাংশ সময়ই প্রতিটি দোকান ছিল ক্রেতা শূন্য। অন্যদিন যেখানে হাজারো মানুষের সমাগম চোখে পড়তো, সেখানে এখন থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।

মার্কেটের প্রায় প্রতিটি দোকান খোলা থাকলেও নেই কোনো ক্রেতা। বিক্রেতারাই বসে বসে নিজেদের মধ্যে গল্প-গুজব আর প্রাণী-পাখিকে খাওয়ানো এবং তাদের যত্ন নিয়েই সময় পার করছেন। অনেকেই আবার হাক-ডাকের মধ্য দিয়ে চেষ্টা করছেন ক্রেতা খোঁজার।

খালি সড়ক।  ছবি: বাংলানিউজ

কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, প্রাণী-পাখি থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে এমন ভয়ে নয়, বরং করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে মানুষ ঘর থেকে বের না হওয়া এ মন্দার কারণ। তবে এই মন্দাটিও খুব বেশি পরিমাণে নয়। আর তারাও রয়েছেন সর্বদা সচেতন।

এই বিষয়ে পোষা প্রাণী-পাখির দোকান ‘বার্ডস প্যালেস’-এর কর্মকর্তা মো. রাজু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, করোনার প্রভাবে সাম্প্রতিক সময়ে পোষা প্রাণী-পাখির বিকিকিনিতে কিছুটা মন্দা চলছে। তবে এটি হচ্ছে মানুষ ঘর থেকে খুব কম বের হচ্ছে বিধায়। তাছাড়া প্রাণী-পাখি থেকে করোনা ছড়াবে, এমন কোনো বিষয় এখন পর্যন্ত নেই। সেটি বিবেচনা করে যে ক্রেতারা আসছেন না, বিষয়টি তাও নয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারো বিক্রি বাড়বে।

...

একই মার্কেটের ‘মিনি হবি জু’-এর কর্মকর্তা মো. রানা বাংলানিউজকে জানান, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বেশ ভালো রকমের মন্দায় পড়েছে পোষা প্রাণী-পাখির ব্যবসা। অন্য সময় যেখানে দিনে প্রয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার বিক্রি হতো, এখন তা একেবারেই নেই।

শুধু প্রাণী-পাখি নয়, বাজার ঘুরে দেখা গেছে একুরিয়ামের দোকানগুলোর অবস্থাও একই রকম। সেখানেই ব্যবসায়ীরা ভুগছেন ক্রেতা খরায়। এ বিষয়ে ফিশ গার্ডেন, ওশান ওয়ার্ল্ড, ফিশ একুরিয়াম, ফিশ প্যালেসসহ বিভিন্ন দোকানের ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার প্রভাব পড়েছে তাদের ব্যবসাতেও। আর প্রাণী-পাখি ও মাছের প্রতি সৌখিন মানুষের যে আগ্রহ, করোনা ভাইরাসের প্রভাব কেটে গেলে আবারো ব্যবসায় এগিয়ে যাবে এই খাতটি, এমনটাই মন্তব্য তাদের।

...

এদিকে পোষা প্রাণী-পাখি থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয় কি-না তা এখনো স্পষ্ট নয় বিধায় পশুপাখি থেকে সাময়কিভাবে দূরত্ব বজায় রাখায় উচিত বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক এবং সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান।

এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে আমাদের মধ্যে যে ভাইরাসটা ছড়াচ্ছে, এটা মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে। প্রাণী থেকে কিন্তু নয়। প্রাণী থেকে একবার চলে এসেছে, এখন আর সেটা নয়। হ্যাঁ, তবে আমরা এখনো জানি না প্রাণীরা আবার এতে আক্রান্ত হচ্ছে কি-না। সুতরাং আমাদের সাবধান থাকা তো অবশ্যই জরুরি। আর আমাদের যদি প্রাণী-পাখি থাকে সেগুলো থেকে এখন দূরত্ব বজায় রাখাই ভালো। এছাড়া যতটা সম্ভব প্রাণী-পাখির স্পর্শ এড়িয়ে চলা ভালো। আর তাদের খাওয়ানো বা গোসল করানোর সময় অবশ্যই যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করে করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২০
এইচএমএস/ এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।