ঢাকা, সোমবার, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

লকডাউন না মেনেই চলছে টোলারবাগের জীবনযাত্রা

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২০
লকডাউন না মেনেই চলছে টোলারবাগের জীবনযাত্রা

ঢাকা: পুলিশের আন্তরিক প্রচেষ্টার পরও ‘লকডাউন’ অবস্থা মানছেন না রাজধানীর টোলারবাগ এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করেই নানা অজুহাতে এলাকা থেকে বের হচ্ছেন ও প্রবেশ করছেন লকডাউনে থাকা এ এলাকার অনেক বাসিন্দা।

মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন আনসার ক্যাম্প এলাকার টোলারবাগ ২ নম্বর গেটের সামনে গিয়ে দেখা যায়, গেট বন্ধ করে বাইরে থেকে রেইনকোট, মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস পরে পাহারা দিচ্ছে পুলিশের একটি দল। গেটের অন্যপাশে এলাকার বাড়ি মালিক সমিতি কর্তৃক নিয়োজিত এক নিরাপত্তাকর্মী ও সমিতির এক প্রতিনিধিও আছেন।

কিন্তু, সবাই মিলেও আটকে রাখতে পারছেন না ওই এলাকার বাসিন্দাদের।  
 
এক পর্যায়ে এলাকার বাসিন্দা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির এক কর্মকর্তা বাজার নিয়ে প্রবেশ করতে চান ভেতরে। কেন বের হয়ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই কিছুক্ষণ আগে বের হয়েছিলাম। খাবারদাবার কিনলাম আরকি। সবকিছু বন্ধ আছে, কিন্তু খাবার তো লাগবে। এটা ছাড়া তো বাঁচা যাবে না! আমরাও বের হওয়ার চেষ্টা করছি না, কিন্তু যেহেতু খাবার শেষ বের না হয়ে তো উপায় নেই।
 
ঝুঁকি আছে জেনেও নিয়তির ওপর নির্ভর করে চলাফেরা করা এ বাসিন্দা পণ্য সরবরাহে সরকারের কোনো উদ্যোগ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঝুঁকি আছে জানি, কিন্তু চলতে গেলে তো বিভিন্ন জিনিসের দরকার। খাবার দরকার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান এগুলা দরকার। সরকারতো আমাদের এগুলো সরবরাহের ব্যবস্থা করছে না। আমাদেরতো বের হতে হবে। বাকিটা আল্লাহ যা করেন।  
 
এদিকে টোলারবাগ এলাকার আরেক বাসিন্দা গতকাল সোমবার (২৩ মার্চ) লকডাউন অবস্থাতেই ব্যাংকে যান। সেখান থেকে তিনি যান তার মামার বাসায়। মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) আবারও এলাকায় ফিরেছেন তিনি, চেষ্টা করছেন গেট দিয়ে প্রবেশের।  

লকডাউন না মেনেই চলছে টোলারবাগের জীবনযাত্রা।  ছবি- শাকিল আহমেদ
 
কোনোভাবেই এলাকাবাসীকে প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝাতে পারছেন না বলে দাবি করেন এখানে দায়িত্বরত পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবদুস সালাম। একপর্যায়ে এলাকাবাসীর গেট থেকে বের হওয়া ও প্রবেশে চাপ প্রয়োগের চিত্রও সরেজমিনে দেখান তিনি।  

দারুস সালাম থানার এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গতকাল নাইট ডিউটি করেছি। আবার সকাল ৭টা থেকে এই গেটের দায়িত্বে কাজ করছি। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত (দুপুর) মানুষ শুধু বের হতে চায়, যারা বের হয়েছে প্রবেশ করতে চায়। আমরা যদি বের হতে না দিই, তাহলে চাপ প্রয়োগ করে, নানান অজুহাত দেখায়। জিনিসপত্র কেনা, ওষুধ কেনা এসব কারণ দেখায়। তখন মানবিক কারণে বের হতে দিতে হয়।  

‘আবার এসব কারণ দেখিয়ে সড়কের উল্টো পাশের দোকান থেকে সিগারেট কিনে আনছে এমন বাসিন্দাদেরও দেখেছি। সকালে এক বয়স্ক ব্যক্তি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়েছেন। তাকে বের হতে না দিলে আমার ওপর চিৎকার করে বলেন- পাকিস্তানি তাড়ায়া দিছি, ভাইরাস কি জিনিস। এমন লোকদের নিয়ে কাজ করছি ভাই। কেউ কথা শোনে না। ’

টোলারবাগ এলাকায় নিয়োজিত পুলিশদল।  ছবি- শাকিল আহমেদ  
আবদুস সালাম আরও বলেন, এখানে যে বাড়ি মালিক সমিতি আছে কথা ছিল তারা একটি কমিটি করে দেবে। কারও কোন জিনিস লাগলে সেই কমিটি গেটের কাছে লিস্ট আর টাকা রেখে যাবে। বাইরে থেকে স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে সেগুলো আনিয়ে আবার গেটের কাছে রেখে দেওয়া হবে। কমিটির সভাপতি আহাদ সাহেব নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে এসব নিয়ে সকালে একবার কথা হয়েছে। এখন তার মোবাইল বন্ধ।
 
এদিকে গেটে থাকা মালিক সমিতির প্রতিনিধি জুয়েল মিয়া বলেন, আমাদের এই এলাকার ভেতরেই একটা বাজার আছে। মানুষ কিন্তু চাইলে সেখান থেকেই কিনতে পারে, কিনবে না। এই বাজারে একটু হয়তো দাম বেশি। কমে কেনার জন্য বাইরের বাজারে যায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২০ 
এসএইচএস/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।