ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রমরমা সিনেমা হল এখন রিকশার গ্যারেজ

শরিফুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০২১
রমরমা সিনেমা হল এখন রিকশার গ্যারেজ ঠাকুরগাঁও সদরের মৌসুমী সিনেমা হলের একাংশ এখন অটোরিকশার গ্যারেজ

ঠাকুরগাঁও: বাংলা সিনেমার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশজুড়ে কমেছে সিনেমা হলের সংখ্যা। বর্তমানে হল বিমুখ মানুষ টেলিভিশিন-কম্পিউটারসহ নানান মাধ্যমে খুঁজে নিচ্ছে নিজেদের পছন্দের সিনেমা।

একটা সময় ছিল সদ্য মুক্তি পাওয়া নতুন বাংলা ছবি দেখতে মানুষ ছুটে যেত সিনেমা হলে। পরিবার-পরিজন নিয়ে দল বেঁধে বাংলা ছবি দেখা বিনোদনের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ঈদ-পূজা, পালা-পার্বণে গ্রাম ও শহরের মানুষ সিনেমা হলের সামনে লাইন ধরে দাঁড়াতো পছন্দের সিনেমার টিকিট কাটতে। এমন প্রথাও চালু হয়েছিল যে, নতুন জামাই শ্বশুরবাড়ি গেলে নতুন বউ ও শ্যালক-শ্যালিকাদের নিয়ে সিনেমা দেখতে যেতেন!

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়গাঁও ইউনিয়নের মোলান খুড়ি গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি যখন ১৯৯৫ সালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নে বিয়ে করি, বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে শালা-শালিদের নিয়ে সিনেমা দেখতে যেতাম কর্ণফুলী, বলাকা, আলিয়া ও মৌসুমী সিনেমা হলে— এইসব হলে প্রায় ছবি দেখতে যেতাম।

তিনি আরও বলেন, বেদের মেয়ে জোসনা, খায়রুন সুন্দরী, কমলার বনবাস, কাসেম মালার প্রেম, ঝিনুক মালা, রাখাল বন্ধু, গরীবের সংসার, ভাত দে— এইসব ছবি দেখতে ছুটে যেতাম সিনেমা হলে। এসব সিনেমা আগে সিনেমা হলে গিয়ে দেখতাম। পরে গ্রামগঞ্জে সিডি-ভিসিআর নিয়ে সবাই মিলে একসাথে আবার দেখতাম।
বলাকা সিনেপ্লেক্সে সিনেমার পোস্টারের বদলে ঝুলছে কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যানার

এক সময়ের রমরমা সিনেমা হলের অনেকগুলোই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে স্কুল ভবন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গোডাউন হিসেবে। আবার সেই সব সিনেমা হলের সামনে সিনেমার পোস্টারের বদলে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার ব্যানার-ফেস্টুন ঝুলতেও দেখা যায়।  

ঠাকুরগাঁও সদরের মৌসুমী সিনেমা হলের একাংশ এখন অটোরিকশার গ্যারেজে পরিণত হয়েছে। বাকি অংশে ওয়ার্ল্ডপ্লাস রেসিডেন্সিয়াল স্কুল। অন্যদিকে জেলার সবচেয়ে বড় সিনেমা হল বলাকা সিনেপ্লেক্সের সামনের দেয়ালে সিনেমার পোস্টারের বদলে ঝুলছে একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যানার। এই সিনেমা হলটিও গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

শহরের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট আবু তরাব মানিক বলেন, ’৮০ দশকে মানুষ সিনেমা হলসহ সিডি-ভিসিআরে সিনেমা দেখতো। শুক্রবার এলে বিকেল তিনটার সময় কাজকাম গুছিয়ে সাদাকালো টিভিতে বিটিভির প্রচারকৃত সিনেমা দেখতে বসে পড়তো। এখন আর এইসব দৃশ্য চোখে পড়ে না।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান অরুণাংশ দত্ত টিটু বলেন, সিনেমা হল আর সাদাকালো টিভি একসময় খুব চলতো, এখন আর চোখে পড়ে না। এখন স্মার্টফোন আর ডিশ লাইনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের খবর ও বিনোদন ঘরে বসে দেখতে পায় মানুষ।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২১
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।