ঢাকা, শুক্রবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

চিকিৎসকের স্ত্রীর নির্যাতনে গুরুতর আহত শিশু গৃহকর্মী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১
চিকিৎসকের স্ত্রীর নির্যাতনে গুরুতর আহত শিশু গৃহকর্মী

ব‌রিশাল: চিকিৎসকের স্ত্রীর অমানসিক নির্যাতনে গুরুতর আহত নিপা বাড়ৈ নামে এক শিশু গৃহকর্মী। চিকিৎসা না করিয়ে ঢাকা থেকে লোক মারফত এলাকার চায়ের দোকানের সামনে গৃহকর্মীকে ফেলে রাখার ঘটনায় হতবাক বরিশালের উজিরপুর এলাকার হারতা ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ভোরে নিপা নামে ওই শিশু গৃহকর্মীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে পুলিশ। চিকিৎসায় হয়তো ১১ বছরের ওই শিশুর শরীরের ক্ষত ঠিক হলেও নির্যাতনের মানসিক চাপ মুক্ত হতে অনেকটা সময় পার করতে হবে বলে মনে করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা।

নিপার পরিচিত স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নিপার বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন। আর তার মা সংসার ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। নিপা অনেকটাই অসহায়ত্বের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন। অভাব-অনটনসহ পরিবারিক বিভিন্ন কারণে নিপার দেখভাল করাটা তার বাবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাই উজিরপুরে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখতে এসে অর্থোপেডিক ও ট্রমা বি‌শেষজ্ঞ ডা. সি এইচ রবিন ওই শিশুটিকে তার পরিবারের কাছে ঢাকায় নিতে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

ডা. রবিনের ঘনিষ্টজনরা জানান, রবিন আশ্বাস দিয়েছিল নিপাকে লেখাপড়া করাবেন। আর লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে তার স্ত্রী রাখি দাসের কাজেও সহায়তা করবে। কিন্তু একটু ভালো থাকতে গিয়ে শিশুটিকে এভাবে অমানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হবে তা কেউ কল্পনাও করেননি। কাজের জন্য তাকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খাটানোর বিষয়টিও দুঃখজনক বলেও জানান তারা।

তাদের মতে, ডা. রবিনের স্ত্রী যদি ভুলেও মারধরও করে থাকেন, একজন চিকিৎসক হয়ে রবিন তার চিকিৎসা করাতে পারতেন। কিন্তু এভাবে ঢাকা থেকে লোক মারফত অসুস্থ শিশুটিকে এলাকার চায়ের দোকানের সামনে ফেলে রেখে যাওয়াটা তার ঠিক হয়নি।

যদিও পুরো বিষয়টি জানতে ওই চিকিৎসকের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভি করেননি।

জানা গেছে, গত বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতে উজিরপুর থানা পুলিশ জানতে পারে নিপা নামে ওই শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের খবর। পরে বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ভোরে তাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। নিপা উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়‌নের উত্তর জামবা‌ড়ি গ্রা‌মের ননী বা‌ড়ৈর কন‌্যা।  

নিপার স্বজনরা জানান, রাজধানীর শ‌্যামলীতে ডা. সি এইচ র‌বিন নামে এক চি‌কিৎসকের বাসায় গত ছয় মাস আগে কাজে যায় নিপা। কয়েক‌দি‌ন প‌রেই নিপার ওপর নির্যাতন শুরু করেন ডা. র‌বি‌নের স্ত্রী রা‌খি দাস। সর্বশেষ ডা. রবি‌নের সহযো‌গী বাসু বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ‌্যা সাড়ে সাতটায় ঢাকা থে‌কে নিপা‌কে নি‌য়ে এসে উজিরপুর উপজেলার উত্তর জামবা‌ড়ি এলাকার এক‌টি চায়ের দোকা‌নের সামনে রেখে চ‌লে যান।

নিপার  চাচি মু‌ক্তি বা‌ড়ৈ জানান, মোবাইলে কল করে নিপা‌কে চাইলেও কথা বলতে দিতেন না ওই চি‌কিৎসকের স্ত্রী। আর নিপাকে ভয় দেখিয়ে মারধ‌রের কথাও স্বজনদের জানতে দেওয়া হ‌তো না। মাঝেমধ্যে নিপা মোবাইল ফোনে কথা বলতো, কিন্তু নির্যাতনের বিষয়টি কখনো বলতে পারেনি। এখন জেনেছি, আমাদের সঙ্গে নিপা যখন মোবাইলে কথা বলতো তখন ডাক্তারের স্ত্রী নিপাকে বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখাতেন।

তিনি জানান, ডা. রবি‌নের সহযো‌গী বাসু নিপাকে দোকানের সামনে রেখে যাওয়ার পর নিপা‌র শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাই। তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্নের অভাব নেই। এছাড়া তার শরীরে বি‌ভিন্ন স্থানে ছ‌্যাকাসহ আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। এম‌নকি তার মাথায়ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে অসুস্থ নিপা জানান, তাকে ঠিক মতো খেতে দেওয়া হতো না। আর কাজে ভুল হলেই চাকু, খুন্তি দিয়ে এবং গলা চেপে ধরে মারধর করতেন ডা. র‌বি‌নের স্ত্রী রা‌খি।

উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ‌্য কমপ্লে‌ক্সের মে‌ডি‌ক্যাল অফিসার ডা. মো. শামসুদ্দোহা তাওহিদ জানান, শিশুটির শরীরে নতুন ক্ষতের সঙ্গে পুরাতন ক্ষতও রয়েছে। ক্ষতগুলো সারলেও তার মান‌সিক ক্ষত ঠিক হ‌তে সময় লাগ‌বে। শিশু‌টির চি‌কিৎসা চলছে।

উজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল আহসান বাংলানিউজকে জানান, খবর পে‌য়ে আহত অবস্থায় শিশু‌টি‌কে উদ্ধার ক‌রে উপ‌জেলা স্বাস্থ‌্য কম‌প্লে‌ক্সে ভ‌র্তি করেছি। এটি আমাদের দা‌য়িত্ব, আর যেহেতু ঘটনা‌টি ঢাকার সেহেতু কীভা‌বে আইনগত ব‌্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সে পদক্ষেপও নি‌চ্ছি। এ ঘটনায় যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হ‌বে।

তিনি জানান, জানতে পেরেছি ডা. রবিনের বাসা ঢাকার শ্যামলীতে। তিনি প্রতি সপ্তাহে উজিরপুরে এসে রোগী দেখেন। কিন্তু কোন জায়গায় তিনি রোগী দেখেন তা জানার চেষ্টা চলছে। ডা. রবিনের ঢাকার বাসার ঠিকানা পেলেই সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১
এমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।